মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইম্পিচ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার, রিপাবলিকান কেভিন ম্যাককার্থি এই ঘোষণা করেছেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের দিক থেকে দেখলে, এটা প্রত্যাশিত দিকেই অগ্রসর হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর বছর খানেক পরেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই অবস্থায় রিপাবলিকানরা ঘোলা জলে মাছ ধরে নিজেদের অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করছে। মহামারী বিধ্বস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে, রিপাবলিকানরা সেই দিক থেকে ভোটারদের নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। ডেমোক্র্যাটিক মেশিনারিতে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক টার্গেটের অভাব রয়েছে। এই অবস্থায় প্রেসিডেন্টের পুত্র হান্টার বাইডেনকে টার্গেট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ম্যাককার্থি। ওবামা প্রশাসনের সময় যখন বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন হান্টারের নানা ব্যবসা সংক্রান্ত চুক্তি থেকে তারও ফায়দা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। বাইডেন পুত্রের বিরুদ্ধে হাউসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধোপে টিকবে না বলেই মনে হয়। হাউস অব ওভারসাইট কমিটির আগস্টের মেমোরান্ডামও বিশেষ শক্তিশালী নয়। এতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, “বিদেশী উৎস” থেকে বাইডেন এবং তার সহযোগীদেরকে ২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি পেমেন্ট করা হয়েছে। যদিও হাউস ওভারসাইট কমিটির চেয়ারপার্সন, রিপাবলিকান জেমস কামের সম্প্রতি স্বীকার করে নিয়েছেন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে এই আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একটি ডেমোক্র্যাট-পন্থী ওয়াচডগ গ্রুপ, কংগ্রেশনাল ইন্টেগ্রিটি প্রোজেক্টের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাইডেনকে নানা সুবিধা করে দিতে ব্যবসায়ীক বিষয়বস্তুতে প্রভাব তৈরি করার জন্য বাইডেন “ব্র্যান্ড” ব্যবহার করা হয়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারেও তদন্ত করে জোরালো কিছু পাওয়া যায়নি। সব শেষে, ইউক্রেনের বারিসমা নামে একটি বিদ্যুৎ সংস্থা, যেটির বোর্ডে হান্টার বাইডেন একজন সদস্য, সেটির ব্যাপারে তদন্ত সমাপ্ত করার জন্য প্রসিকিউটরদেরকে বাইডেন ঘুষ দিয়েছেন বলে একটি “যাচাই না করা এফবিআই টিপের” ভিত্তিতে যে দাবি করা হয়েছে, সে ব্যাপারেও বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একইভাবে দুই হুইসল-ব্লোয়ারের সাক্ষ্যর ভিত্তিতে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে হান্টারের ট্যাক্স রিটার্নের ব্যাপারে একাধিক বছর ধরে চলা তন্দন্তে বিচার বিভাগ ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, সে ব্যাপারেও জোরালো প্রমাণ নেই।
যদি ধরে নেওয়াও হয় যে বাইডেনকে সম্পূর্ণ ইম্পিচমেন্টে ম্যাককার্থি জড়াতে পারেন, তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট সেনেটে গিয়ে মুক্তি পেয়ে যাবেন। তবে আসল সমস্যা হলো প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডাবল ইম্পিচমেন্ট। তবে সম্ভবত সেই সন্দেহজনক রেকর্ডের মিথ্যা সমতা তৈরি করার প্রচেষ্টা হিসাবে এবং পরবর্তী বছর ডেমোক্র্যাটদের জন্য ভোটারদের সমর্থনের ভিতে আঘাত করার আশায় ম্যাককার্থি একই সাথে ট্রাম্পের সমর্থন মজবুত করার চেষ্টা করছেন এবং হাউসে নিজের পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত করতে চাইছেন। তবে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, ম্যাককার্থির এই পদক্ষেপ সামনের বছরের নির্বাচনে তার দলের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তার কারণ বাইডেনের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলোকে হাতিয়ার করে ডেমোক্র্যাটরা জনসমর্থন মজবুত করে তুলতে পারেন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বতন্ত্র ভোটাররা এই কৌশলকে একটি নিষ্ফলা পক্ষপাতিত্ব এবং রিপাবলিকান পার্টির ওপর ট্রাম্পের দীর্ঘ ছায়া হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন।