গাজায় ইজরায়েলে বোমাবর্ষণ অভিযানের দ্বিতীয় মাসে প্রবেশ করতে চলেছে। ২.৩ মিলিয়ন মানুষের বাসস্থান এই ভুমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের এই ছোট্ট ভুখণ্ডকে রাষ্ট্রসংঘ “হাজার হাজার শিশুর কবরস্থান” এবং “প্রত্যেকের জন্য একটি জীবন্ত নরক” হিসাবে বর্ণনা করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ইজরায়েলী আক্রমণে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অনেক মহিলা এবং শিশু। গত ৭ অক্টোবর হামাস ইজরায়েলের সীমানায় ঢুকে কমপক্ষে ১,৪০০ জন ইজরায়েলীকে হত্যা করার পর ইজরায়েল এই পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। ইজরায়েলের আক্রমণের ফলে বিপুল মৃত্যুর পাশাপাশি প্রায় সাড়ে দশ লক্ষ মানুষ নিজেদের বাসস্থান হারিয়েছেন। দশ লক্ষাধিক গাজার বাসিন্দাকে ইজরায়েল দক্ষিণ দিকে সরে যেতে বলেছে এবং এনক্লেভে বোমাবর্ষণ চালিয়ে গিয়েছে। উঁচু বিল্ডিংগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং গাজা এখন একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমনকি উদ্বাস্তু শিবির, স্কুল, হাসপাতাল এবং অ্যাম্বুলেন্সকেও রেয়াত করা হয়নি। তাই রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্তোনিও গাটেরেস যুদ্ধবিরতি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিগত চার সপ্তাহে গাজায় রাষ্ট্রসংঘের ৮৯ জন কর্মী নিহত হয়েছেন, যা ইতিহাসের যে কোনো তুলনাযোগ্য সময়সীমায় সংগঠনের কর্মীদের সর্বাধিক মৃত্যু। এছাড়া এই যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্বে বিশাল প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। বিশেষত আরবের রাস্তাঘাটে এই দৃশ্য বেশি চোখে পড়ছে। তবে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি দূরের কথা, মানবিকতার খাতিরেও হামলায় বিরতি দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
ইজরায়েলী সেনা এখন গাজা শহরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছেন। এই অঞ্চলটি মূলত হামাসের একটি শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। এখানে এখন সন্ত্রাসবাদীদের সাথে রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। লক্ষ্য স্পষ্ট। হামাস সরকারের পতন ঘটানো, কমান্ডারদের খতম করা, তাদের সেনা পরিকাঠামো ধ্বংস করা এবং গত ৭ অক্টোবর হামাস জঙ্গিরা ইজরায়েল থেকে যাদের ধরে এনে পণবন্দী করেছে, তাদের উদ্ধার করা। অতীতে ইজরায়েল এই অঞ্চলে চিরাচরিত সেনার বিরুদ্ধে আক্রমণে দ্রুত জয় অর্জন করেছে। তবে যুদ্ধে তাদের ট্র্যাক রেকর্ড সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইরজায়েলের কমপক্ষে ৩০ সেনার মৃত্যু হয়েছে এবং গাজা শহরে লড়াই শুরু হওয়ার পর আরও রক্ত ঝরবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইজরায়েল যদি নিজেদের অভিযান চালিয়ে যায়, গাজার বাকি অংশকে আগুনে পুড়তে থাকা একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করে, তাহলে পশ্চিম এশিয়াতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ইয়েমেনের হউথিসরা এর মধ্যেই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছে। ইজরায়েল-লেবানীজ সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। হিজাবুল্লাহ বলছে, “সব রাস্তাই খোলা।” একমাত্র যে দেশটি ইজরায়েলকে থামাতে পারে, সেটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে বাইডেন প্রশাসন অধিকার এবং আইন-ভিত্তিক শাসনের স্বপক্ষে অনেক ভাষণ দিলেও এখনও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় যে নেতৃত্ব প্রদর্শনের কথা বলে, এখন তাদের সামনে তা করে দেখানোর একটা সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে চাপ তৈরি করে ইজরায়েলকে বোঝানো উচিত যে তারা নিজেদের আত্মরক্ষার দোহাই দিয়ে এভাবে প্যালেস্টাইনের মানুষের হত্যালীলা চালিয়ে যেতে পারে না। ইজরায়েলকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য করা দরকার।