ক্রিকেটে এশিয়ান সংহতির প্রচার করার উদ্দেশ্য নিয়ে এশিয়া কাপ টুর্নামেন্ট পথ চলতে শুরু করে। যদিও এটি অনেক সময় ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের সংজ্ঞা নির্ধারণকারী নানা সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে। এশিয়ান ক্রিকেটের অন্যতম তিনটি বড় দল হিসাবে পরিচিত ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ১৯৮৪ সালে এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়। তবে শীঘ্রই এই প্রতিযোগিতাটি এই দেশগুলোর নানা রাজনৈতিক সমীকরণের জাঁতাকলে পড়ে যায়। মূলত ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব এই ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দেখা যায়। উপমহাদেশীয় এই সংঘাত একদিকে যেমন চলেছে, তেমনি অন্যদিকে এই টুর্নামেন্টের আকার আরও বড় হয়েছে। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, এমনকি হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছে। বুধবার পাকিস্তানের মুলতানে যখন টুর্নামেন্টটির ১৬তম সংস্করণের উদ্বোধন হয়, সেখানে নেপালও নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। টুর্নামেন্টের এই এডিশনেও নানা সমস্যা ছিল। গোটা টুর্নামেন্টটাই ওয়াঘা বর্ডারের ওপারে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। যদিও ভারতীয় ক্রিকেট টিম কোনোভাবেই পাকিস্তানে যেতে রাজি না হওয়ায়, টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজক হিসাবে শ্রীলঙ্কার নাম যোগ করা হয়। পাকিস্তান প্রথমে এটি মেনে নিতে রাজি না হলেও পরে বাস্তব পরিস্থিতি দেখে সুর নরম করে। দুঃখের বিষয়, ভারতীয় টিম শেষবার পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখেছিল ২০০৮ সালে করাচিতে এশিয়া কাপের সময়। তারপর সিন্ধু দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। পুরানো ক্ষত এখনও শুকোয়নি। এবারের এশিয়া কাপে অংশগ্রহণকারী ছয়টি দলকে দুটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছে। সুপার ফোর পর্যায়ের পর আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর কলোম্বোতে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে আইসিসি ইভেন্ট এবং এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচগুলো শুধুমাত্র একটা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। তবে রাজনীতির বাইরে চোখ রাখলে বোঝা যাবে, আগামী অক্টোবর মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে চলা বিশ্বকাপের মহড়া হিসাবে এই টুর্নামেন্টকে ব্যবহার করবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা সহ অন্যান্য অংশগ্রহণকারী দল। ভারতীয় স্কোয়াডে যে খামতি রয়েছে, বর্তমানের টুর্নামেন্টে তার সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। চোট কাটিয়ে দলে ফিরেছেন কে.এল. রাহুল, শ্রেয়স আইয়ার এবং জসপ্রীত বুমরাহ। তবে উদ্বেগ রয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া আয়ারল্যান্ড টি-২০ সিরিজে বুমরাহ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে ভারতীয় দলকে দেখে মনে হয়নি তারা থিতু হতে পেরেছে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির চওড়া কাঁধের ওপর নির্ভর করে থাকা ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপ কেমন পারফর্ম করে, তাতে নজর থাকবে। ওডিআইতে সূর্যকুমার যাদবকে নিজের স্বাভাবিক ছন্দ খুঁজে পেতে হবে। ঘটনাচক্রে, এবারের এশিয়ার কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওডিআই ফরম্যাটে। যদিও টুর্নামেন্টের আগের কয়েকটি এডিশন টি-২০ ফরম্যাটে হয়েছে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলটি এখন ট্রানজিটরি ফেজে রয়েছে। তবে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কাহিনী হয়ে উঠতে পারে আফগানিস্তান। তালিবানের বিধি-নিষেধের জেরে জীবন ও খেলাধূলার ওপর অনেক বাধা নেমে এলেও সেদেশের ক্রিকেটাররা যদি ভালো খেলতে পারেন, তা অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে উঠবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত একবারও এশিয়া কাপ খেতাব জিততে পারেনি। তারা নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করার জন্য আবার একটি সুযোগ পাচ্ছে। তবে পাল্লেকেলেতে শনিবার অনুষ্ঠিত হতে চলা ভারত-পাকিস্তানের লড়াইয়ের ওপর সবার নজর থাকবে। আসন্ন বিশ্বকাপে এশিয়ার কোন দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাল্লা ভারী, সেটা এই ম্যাচের ফলাফল থেকে কিছুটা জানা যাবে।