৮০ বছর বয়সী জো বাইডেন ঘোষণা করেছেন যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে আবার লড়াই করতে চান। আসন্ন নির্বাচনে তিনি যদি জয়ী হতে পারেন, তাহলে তিনি ডেমোক্র্যাটদের ২০২০ সালের রেকর্ড ভেঙে, সেদেশের সবচেয়ে বেশি বয়সের প্রেসিডেন্ট হয়ে উঠবেন। ভারতীয়-আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নির্বাচনের ময়দানে বাইডেনের সঙ্গী হিসাবে নামবেন বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে ৭৬ বছর বয়সী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প কনজার্ভেটিভ প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়াইয়ের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। ২০২০ সালে মার্কিন মুলুকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে ছবি দেখা গিয়েছিল, এবার তেমনটাই ফের দেখা যেতে পারে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে এরকম অভূতপূর্ব পরিস্থিতি আগেও তৈরি হয়েছিল। ১৮৮৮ এবং ১৮৯২ সালে বেঞ্জামিন হ্যারিসন এবং গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড; ১৮৯৬ এবং ১৯০০ সালে উইলিয়াম ব্রায়ান ও উইলিয়াম ম্যাককিনলে; এবং ১৯৫২ ও ১৯৫৬ সালে আদলাই স্টিভেনসন ও উইট আইসেনহাওয়ারের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছিল। গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই নিয়ে চতুর্থবার প্রেসিডেন্সিয়াল পদপ্রার্থীদের পুনরাবৃত্তির নজির দেখা যাবে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, নীতি নির্ধারণের সমস্যায় জর্জরিত ও রাজনৈতিক দিক থেকে তিক্তভাবে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যাওয়া সেদেশের জনগণকে নয়া দিশা দেখাতে, ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান, উভয় দলের মধ্যে কেন নতুন ও যোগ্য অন্য কোনো নেতা দেখা যাচ্ছে না।
এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো বাইডেন তার এই নির্বাচনী লড়াইয়ের ঘোষণা যে ভিডিওতে করেছেন, সেটি শুরু হয়েছে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে আক্রমণের ঘটনার দৃশ্য দিয়ে। অর্থাৎ তাঁর স্পষ্ট ইঙ্গিত, ওভাল অফিসে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে ট্রাম্পের MAGA সংক্রান্ত লক্ষের বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন। এছাড়া ২০২০-তে “নির্বাচনে চুরির” যে বিষয়টি জানা গিয়েছে, সেটির গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে দেওয়ার যে ঝুঁকি আছে, তাতেও তিনি গুরুত্ব দেবেন। তবে নিজেকে শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক বিকল্প প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরার চেয়ে তাঁকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। আগামী ১৮ মাসে, বাইডেনের রাজনৈতিক প্রচার শুরু হওয়ার সাথে সাথে এই বিষয়টি স্পষ্ট হবে এবং সেটা তাঁর কাছে একটি শিক্ষনীয় বিষয়ও হয়ে উঠতে পারে। ধনী আমেরিকানদের ওপর আরও বেশি ট্যাক্স আরোপ করা, সোশ্যাল সিকিউরিটি সিস্টেম গড়ে তোলা, মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কার মোকাবিলা করা, কর্মসংস্থান তৈরিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত নীতিতে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বাস্তব সম্মত সমাধান প্রদান করার মতো বিষয়গুলোতে যে কাজ বাকি আছে, তা তাঁকে সম্পূর্ণ করতে হবে। এর পাশাপাশি তাঁকে এটাও মাথায় রাখতে হবে, মহামারির কঠিনতম সময় পেরিয়ে গিয়েছে এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর এক বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে, ৪৬তম এবং ৪৫তম প্রেসিডেন্টের মধ্যে ২০২৪ সালে যেই জয়ী হোন না কেন, তাঁকে জনস্বাস্থ্য এবং বায়োসিকিউরিটি; ইউরোপে ন্যাটোর ভূমিকা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ সমাপ্ত করার জন্য ইউরোপীয়ান শক্তিগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের চ্যালেঞ্জের মতো গভীর বিষয়; এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থানের সম্মুখভাবে কীভাবে আমেরিকাকে রাখা যায়, এই চিরন্তন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ব্যাপক ভাবনা-চিন্তা করতে হবে।