গত সপ্তাহে গুজরাটে এবং রাজস্থানের কিছু অংশে আছড়ে পড়েছিল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। এর জেরে সেখানকার পরিকাঠামোতে বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকে চোট পেয়েছেন। গৃহপালিত পশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে এই গোটা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাত্র দুজন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই সতর্কতা জারি করেছিল আবহাওয়া দপ্তর। বিপর্যয়ের গতিপথ নিয়ে গত ৮ জুন এই ব্যাপারে প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল। ১১ জুনের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঝড়টি ভারতকে বাইপাস করবে না। তবে সেটি শক্তিশালী আকার ধারণ করে গুজরাটের সৌরাষ্ট্র উপকূলে প্রভাব ফেলবে। আবহাওয়া দপ্তর ঝড়টিকে ‘অত্যন্ত গুরুতর’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ঝড়টির গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটারেরও বেশি হতে পারে বলে অনুমান করা হয়। চার দিনের লিড টাইম এবং ঝড়টি কতটা শক্তিশালী হতে পারে, সে ব্যাপারে প্রাথমিক ধারনা পাওয়ার পর গুজরাটের স্থানীয় জেলা প্রশাসন ময়দানে নামে। রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ১০০,০০০ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া কেন্দ্র ও রাজ্যের মোট ৩০টি বিপর্যয় মোকাবিলা টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। বাতিল করা হয় একাধিক ট্রেন। মৎস্যজীবীদেরকে আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়। তারা সমুদ্র থেকে দূরেই ছিলেন।
সৌরাষ্ট্র-কচ্ছ অঞ্চলে বিদ্যুৎ-হীন হয়ে পড়ে ১,০৯২টি গ্রাম। প্রায় ৫,১২০টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮৬টি ট্রান্সফর্মার এবং ২,৫০২টি ফিডার। দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর দোকানপাট আবার খুলেছে। তবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা এখনো ফিরে আসেনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গোপসাগর হোক বা আরব সাগর, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আগাম অনুমান, ঝড় আছড়ে পড়ার ৩৬ থেকে ৬০ ঘণ্টা আগে জানা সম্ভব হচ্ছে। যত বেশি লিড টাইম পাওয়া যাবে, প্রস্তুতির জন্য তত বেশি সময় পাওয়া যাবে। তবে উপকূলবর্তী পরিকাঠামো, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জীবিকার ধরন ও সাইক্লোনের তাণ্ডবের সংমিশ্রণের কারণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকে। ১৯৯৮ সালে গুজরাটে একটি ঘুর্ণিঝড় আঘাত করেছিল। তাতে প্রায় ৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়। এটা মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে, ভারত সেই সময় পেরিয়ে এসেছে। এখন আরও ভালোভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে পারে। তবে সেই সাথে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। একাধিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে, আগামীতে এরকম অনেক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হতে হবে। বার বার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা কোনো চিরস্থায়ী সমাধান হতে পারে না। বরং নিশ্চিত করতে হবে যে উপকূলবর্তী রেগুলেশন অনুযায়ী যেন সমুদ্র থেকে নির্দিষ্ট অনুমোদিত দূরত্বে ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়। এটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। গ্রাম এবং উপকূলে যারা বসবাস করেন, তাদের ঘরবাড়ি মজবুত করে দিতে হবে। ঝড়কে প্রতিহত করার জন্য জলাভূমিতে ম্যানগ্রোভের মতো প্রাকৃতিক প্রাচীর গড়ে তোলা প্রয়োজন।