মণিপুরে জাতিগত হিংসার আগুন জ্বলে ওঠার পর কেটে গিয়েছে ছয় মাস। তবুও মেইতেই এবং কুকি-জো কমিউনিটির মধ্যে যে বিভেদের দেওয়াল তৈরি হয়েছে, তা ভেঙে ফেলার জন্য বিশেষ কিছু করা হয়নি। পরিস্থিতি যেমন ছিল, তেমনই রয়েছে। কয়েকদিন পর পরই সংঘর্ষরত দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হিংসার আগুন জ্বলে ওঠে বা তাদের মধ্যে উস্কানিমূলক কার্যকলাপ দেখা যায়। এর ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। যে সমস্ত এলাকায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেখানে ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কিছুই করা হচ্ছে না। কুকি-জো গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী ইন্ডিজিনাস ট্রাইবাল লিডার্স ফোরাম (আইটিএলএফ) বুধবার ঘোষণা করেছে যে, তারা ট্রাইবাল কমিউনিটি সংখ্যাগরিষ্ঠ, এমন জেলাগুলোতে একজন পৃথক “মুখ্যমন্ত্রী” সহ “স্ব-শাসনের” প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়। এটি চরম অবস্থানের আর একটি নিদর্শন, যার ফলে সংঘর্ষ থামছে না। এমন পদক্ষেপের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। এর ফলে মেইতেইদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়বে। বিশেষত যাদের অন্যান্য আপত্তির মধ্যে রাজ্যের পাহাড়ি জেলাগুলোতে উপজাতিদের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমি অধিকার রয়েছে, তাদের বিক্ষোভের আগুন আরও তীব্র হবে। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর একটি টিম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্মকর্তাদের মধ্যে চূড়াচাঁদপুরে একটি বৈঠক হওয়ার কয়েক দিন পরেই এমন ঘোষণা থেকে স্পষ্ট যে, কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার পরেও রাজ্যের নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন না করে কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরে শান্তি ফেরানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। কুকি-জো কমিউনিটির অন্যান্য দাবির মধ্যে অন্যতম রাজ্য প্রশাসনের বর্তমান নেতৃত্বের পরিবর্তন। ইম্ফল ভ্যালি এবং পাহাড়ি এলাকায় হিংসা দমনে কেন্দ্রীয় সরকার আধাসামরিক বাহিনীর উপর নির্ভর করেছে। রাজ্যে সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে স্বীকার না করলেও এই ধারার কিছু সংস্থান রাজ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তনের বিরোধীতা করা সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের সমর্থন হাতছাড়া না করতে এবং রাজ্য পুলিশের প্রতি কুকি-জো সম্প্রদায়ের লোকজনের যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলা করার জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই সমস্ত অসম্পূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের জেরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। বিবাদরত দুই পক্ষের মধ্যে হিংসা এবং বিভেদ আরও জোরালো হয়েছে। দুই কমিউনিটির মধ্যে শত্রুতা বা হিংসা কমানোর জন্য দৃঢ় নেতৃত্ব এবং উদ্বাস্তু লোকজনকে ঘরে ফেরানোর জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আনতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনার অনুপস্থিতির জেরে মাঝে মধ্যেই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে চলেছে। তাই শান্তি প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্ব সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ ব্যবহার করার মাধ্যমে সতর্কতার সাথে নিরবতা পালনের কৌশল পরিবর্তন না করলে মণিপুরের সমস্যা চলতেই থাকবে।