কর্ণাটকে কংগ্রেস বিপুল জয় অর্জন করেছে। তবে তারপর মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে দলের দুই শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে যে দড়ি টানাটানি হলো, তাতে জয়ের আনন্দে কিছুটা তাল কাটল বলা যায়। যদিও বৃহস্পতিবার এই বিষয়টির মিমাংসা হয়েছে। এটি কৌশলগত দিক থেকে একটি ভালো পদক্ষেপ। সিদ্দারামাইয়া বিরোধী দলনেতা হিসাবে পাঁচবছর কাটানোর পর ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ফিরছেন। তবে এবার দলের সেন্টিমেন্ট এবং প্রয়োজনগুলোর প্রতি তিনি আরও বেশি আন্তরিক হবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ডি.কে শিবকুমার প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন। এক সময় তিনি ভেবেছিলেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। তার এই ভাবনার পিছনে যথেষ্ট কারণও ছিল। কংগ্রেসের নেওয়া কৌশল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর দায়িত্বে অদলবদল হবে। সিদ্দারামাইয়া তার ডেপুটি শিবকুমারকে অগ্রসর হওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। শিবকুমার যে দুটি পদে থাকবেন, তা কংগ্রেসের ঘোষিত নীতির পরিপন্থী। তবে দলের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে, এটুকু আপোষ করা যুক্তিযুক্ত। সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী বিরোধ নিষ্পত্তির মূল কারিগর। এর পাশাপাশি দলের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গেকেও বাহবা দিতে হবে। নির্বাচনে জয়ের পরই দলের মধ্যে যে সমস্ত বিরোধ মাথা চাড়া দিয়েছিল, সেগুলোকে তিনি দক্ষ হাতে মোকাবিলা করেছেন।
ঘটনা হলো কর্ণাটকে ভোট প্রচার এবং একটি নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াতে খাড়গে, শিবকুমার এবং সিদ্দারামাইয়া অসাধারণ দক্ষতা এবং পরিপক্কতা দেখিয়েছেন। এই তিনজনের ব্যক্তিত্ব, স্টাইল এবং নির্বাচনী ক্ষেত্রও আলাদা। সিদ্দারামাইয়া জাতিগত ন্যায়বিচারের একজন জোরালো সমর্থক। এর জন্য তিনি নিজের দলের মধ্যেও লড়তে রাজি। অন্যদিকে শিবকুমার মূলত সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য পরিচিত। তিনি চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কংগ্রেস পার্টির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী পরিচালনা করতে পারেন। মিশুকে স্বভাব এবং সোজাসুজি বার্তা দেওয়ার দক্ষতার কারণে খাড়গে একজন জাতীয় স্তরের নেতা হয়ে উঠেছেন। তিনি কর্ণাটকে দলকে বিশাল অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন এবং দেশের অন্যান্য অংশেও তেমনটা করবেন। এই তিনজনই ভোটপ্রচার চালানোর সময় এককাট্টা হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং হিন্দু-মুসলমান সুসম্পর্কের পক্ষে কথা বলেছেন। কংগ্রেসের আদি ইমেজ হলো এমন একটি পূর্ণাঙ্গ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সব ধর্ম এবং জনজাতির মানুষের ঠাঁই হয়। কর্ণাটকে ভোট প্রচারের মাধ্যমে কংগ্রেস ফের একবার নিজেদের সেই ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। কর্ণাটক মডেল যাতে দেশের অন্যত্রও বাস্তবায়ন করা যায়, তার জন্য খাড়গের দিকে কংগ্রেস কর্মীরা তাকিয়ে থাকবেন। অন্যদিকে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর কাজ হবে রাজ্যের মধ্যে দলের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। জনগণকে ভোটের আগে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো এবার বাস্তবায়িত করতে হবে এবং এমন একটি কর্ণাটক মডেল তৈরি করতে হবে, যা লোকজনের স্বার্থে কাজ করে। এর ফলে রাজ্যের মধ্যে তো বটেই, দেশের অন্যান্য জায়গাতেও কংগ্রেস সুফল পাবে।
COMMents
SHARE