মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণের উর্ধ্বসীমা ছুঁয়ে ফেলার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। জাতীয় ঋণের ওপর সুদ, মিলিটারি বেতনের ট্যাক্স রিফান্ড এবং মেডিকেয়ার ও সোশ্যাল সিকিউরিটি সহ বর্তমানের আইনি বাধ্যবাধকতাগুলোর জন্য পেমেন্ট করতে ধার করার অনুমোদিত মোট ফান্ডের ওপর সরকারের তরফ থেকে বিধি-নিষেধ যুক্ত করা হয়েছে। বাস্তবে যদি ১ জুন ডেডলাইনের মধ্যে এই উর্ধ্বসীমা লঙ্ঘন হয়, তাহলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। ক্রেডিট রেটিংয়ের পতনও হতে পারে। এর পাশাপাশি ক্রমশ বাড়তে থাকা সুদের হারে এবং নিস্তেজ হয়ে পড়া স্টক মার্কেটেও প্রভাব পড়বে। রেহাই পাবে না রিটায়ারমেন্ট এবং সেভিংস অ্যাকাউন্টও। ব্যবসায়ীক অ্যাক্টিভিটির গতি হ্রাস পাবে। স্বাভাবিকভাবে, নিয়োগ বা কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কোভিড-১৯ মহামারির জেরে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব এখনও পুরোপুরি কাটেনি। তারই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ঋণ খেলাপের পরিণাম আরও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই তার কোমরটা আবার ভেঙে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার যদি ২২তম শাটডাউনের পথে হাঁটে এবং সরকারী কর্মীদের কর্মসংস্থানে ছেদ পড়ে, তাতে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়নকারীদের মন জয় করতে এবং ঋণের উর্ধ্বসীমা বাড়াতে বা সাসপেন্ড করার জন্য একটি চুক্তি করার প্রচেষ্টা হিসাবে হোয়াইট হাউস হিসাব করে জানিয়েছে যে কতটা ক্ষতি হতে পারে। ৮.৩ মিলিয়ন কাজ চলে যাবে। প্রকৃত জিডিপির বার্ষিক বৃদ্ধিতে ৬.১% হ্রাস হবে। কর্মসংস্থান ৫%-এ পৌঁছাবে।
এই ফিসক্যাল দুর্দশার কেন্দ্রে রয়েছে ঋণের উর্ধ্বসীমা থেকে জাতীয় অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তিমূলক চক্র কীভাবে এড়াতে হয়, সে ব্যাপারে দ্বিপাক্ষিক ঐক্যমতের অভাব। কিছু বিশ্লেষক পর্যবেক্ষণ করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের নিজের হাত বেঁধে ফেলার জন্য এবং বিশেষ করে এটির লেজিসলেটিভ সম্মতির প্রয়োজনীয়তা ও সেই সাথে কিছু কংগ্রেশনাল পরিচালনামূলক কর্তৃপক্ষের কারণে সরকারি খরচ সীমিত করার জন্য বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে উর্ধ্বসীমাটি একটি উপযোগী বা কার্যকর উপায়। অন্যদের যুক্তি, এই উর্ধ্বসীমাটি একটি অতি পুরাতন পদ্ধতি, যা মজবুত ফিসক্যাল পলিসির ওপর অবাঞ্ছিত বিধি-নিষেধ যুক্ত করে। এর মধ্যে রয়েছে আগে থেকে আইন প্রণয়ন অনুযায়ী নির্ধারিত ফিসক্যাল সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করা। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ঋণের উর্ধ্বসীমার ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হলো যে প্রায় কয়েক বছর পর পরই অর্থনীতিতে এই ধরনের খেলাপের ঘটনা ঘটছে। যে রাজনৈতিক দল হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় নেই, তারা এই উর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে, যাতে প্রশাসনের ফিসক্যাল সংক্রান্ত অগ্রাধিকারগুলোতে নিজেদের সুবিধার্থে কাজে লাগানো যায় এবং নির্বাচনী প্রচারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের গতিকে আরও হ্রাস করা যায়। জুন মাসের ১৫ তারিখে একটি উল্লেখযোগ্য ঋণের বকেয়া পেমেন্ট করার কথা আছে। সরকার ততদিন পর্যন্ত, ক্রমশ সঙ্কুচিত হতে থাকা ফিসক্যাল সংক্রান্ত নড়াচড়া পরিচালনা করতে পারে। তবে রিপাবলিকান দলের সদস্য, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থিকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, বৃহত্তর স্বার্থকে বাদ দিয়ে পক্ষপাতমূলক লক্ষ্য এবং ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে অগ্রাধিকার দিলে, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মধ্যবিত্ত মার্কিন নাগরিকরা তা ক্ষমা করবেন না। বিশেষ করে যদি এই বিপজ্জনক নীতি চালিয়ে যাওয়ার ফলে ভয়ানক অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়, আগামী নির্বাচনের তার প্রভাব পড়বেই।