পৃথিবীতে অনেক মহামারি দেখা দিয়েছে। সেগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে যে অতিমারি পরিস্থিতি নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগে তা হ্রাস পায় অথবা এটি নানা মরসুমে নিজের প্রাদুর্ভাব দেখাতে, নিজেকে বদলে ফেলে। এই প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ কোনো ব্যতিক্রম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) ডিরেক্টর জেনারেল, টেড্রস আধানম ঘেব্রেইসাস গত সপ্তাহে এমার্জেন্সি কমিটির (স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত) পরামর্শের ভিত্তিতে ঘোষণা করেছেন যে, কোভিড-১৯ মহামারি আর আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ নয়। চিন থেকে যে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, পরে যেটি বিশ্বের ২০টি অন্যান্য দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, সেটির প্রেক্ষিতে তিনি প্রথম ঘোষণা করেছিলেন ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি। সেই ঘটনার তিন বছর পর তিনি এই জরুরি পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদ জানাচ্ছিলেন। ডা. টেড্রস আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ আর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মহামারির পর্যায়ে নেই। তবে এর পাশাপাশি তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারির যে আশঙ্কা রয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই ঘোষণার আগে হুয়ের নানা বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছিলেন যে কোভিড-১৯-কে এবার মরসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো একটি রোগ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষের ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই ডিজির এই ঘোষণায় অনেকে স্বঃস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
তবে হু এবং বিশ্বের নানা দেশগুলোকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, এই ঘোষণাকে যেন একটি বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসাবে না দেখা হয় বা হালকাভাবে না নেওয়া হয়। আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো জায়গা নেই। কোভিড এখনও সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়নি। এটির নানা ভ্যারিয়েন্ট এবং সাব-ভ্যারিয়েন্ট এখনও দাপট দেখাচ্ছে। এটি এখনও এরকম কোনো মরসুমি প্যাটার্নে পরিণত হয়নি, যা জানা যেতে পারে বা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যে কোনো সময় এটির নতুন ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণ দেখা দিতে পারে বা রিকম্বিন্যান্ট হতে পারে। যার ফলে দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, লোকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে, এমনকি মানুষের ব্যাপক মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গ্লোবাল হেলথ এক্সপার্টরা বলে আসছেন যে আমাদের স্বাস্থ্যগত দিকের প্রতি সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে, যত্নশীল হতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর পরীক্ষা করে দেখতে হবে, মহামারির মতো বিপদের মোকাবিলা করতে আমাদের শরীর কতটা প্রস্তুত। এছাড়া জেনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ে পারদর্শী INSACOG ল্যাবরেটরির নেটওয়ার্ক এবং কোভিডের দাপটের সময় তৈরি করা পরিকাঠামোকেও অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। এর পাশাপাশি সতর্কতা জারি রাখতে হবে। ভ্যাকসিন প্ল্যাটফর্ম, ওষুধ ডেলিভারি সিস্টেম, অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন চালিয়ে যেতে হবে। এর ফলে বিশ্বের নানা দেশ শুধু কোভিড-১৯ নয়, অন্যান্য সংক্রমণের বিরুদ্ধেও প্রস্তুত থাকতে ও সতর্ক হতে পারবে। কোভিডের দাপটের সময় লোকজন বিশেষ করে টিকাকরণের সময়সূচি এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও মাস্ক পরার মতো যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, সেগুলো চালিয়ে গেলে তা থেকে ফায়দা পাওয়া যাবে।