কাকতালীয় ব্যাপার। ঠিক এক বছর আগে, যখন লেবার পার্টির নেতা অ্যান্থনি অ্যালবানিজ প্রধামন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন, ঠিক সেই সময়ই, এই সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনদিনের অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছেন। তাতে দুই দেশের মধ্যে ক্রমশ বেড়ে ওঠা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত আরও মজবুত হয়েছে। বহুপাক্ষিক কোয়াড মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য মোদির এই সফরসূচী তৈরি করা হয়েছিল। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এই বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিডা একই পথ অবলম্বন করেন। হিরোশিমাতে কোয়াডের একটি সংক্ষিপ্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই মোদির অস্ট্রেলিয়া সফর সম্পূর্ণভাবে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয় হয়ে উঠেছে। মোদির সিডনি সফর নিয়ে এখন জোর চর্চা চলছে। সেখানে তিনি ভারতীয় কমিউনিটির একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নানা ব্যবসায়ীক গোষ্ঠীর সাথেও মোদি কথাবার্তা বলেছেন। গত বছর থেকে এটি মোদি-অ্যালবানিজের মধ্যে ষষ্ঠ মিটিং। সর্বশেষ বৈঠক থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাগুলো করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার একটি দূতাবাস এবং ব্রিসবেনে ভারতের একটি দূতাবাস খোলা, মাইগ্রেশন ও মোবিলিটির ব্যাপারে একটি চুক্তি এবং ভারত-অস্ট্রেলিয়া গ্রিন হাইড্রোজেন টাস্ক ফোর্সের জন্য রেফারেন্সের ব্যাপারে শর্তাবলী চূড়ান্ত করা। দুই দেশের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা জোট, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ। তার কারণ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সর্বাঙ্গীণ অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ও পশ্চিমের দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে দুই দেশ দুটি ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও আগ্রাসী চিনের মোকাবিলা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল স্বাধীন এবং উন্মুক্ত রাখার ব্যাপারে দুটি দেশ সম্মতি প্রকাশ করেছে।
তবে এই সব কিছুর মাঝে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমিউনিটির সদস্যদের উচ্ছ্বাসে কোথাও না কোথাও ছন্দপতন হয়েছে। সিডনির সুপারডোমে হাজির বিশাল জনগণের সমাগমে দুই দেশের নেতা খুশি হয়েছেন। মোদি সেখানে বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকজনের কারণেই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাস্তবে আরও মজবুত হয়ে উঠেছে। সেদেশে থাকা কমিউনিটি সেন্টার এবং বিভিন্ন মন্দিরে খালিস্তানি পন্থী, ভারত-বিরোধী এবং মোদি-বিরোধী স্লোগানের গ্রাফিটি লেপে দেওয়া হয়। এমনকি ভাঙচুরও চালানো হয়। অন্য কিছু গোষ্ঠী এই কাজ করেছে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনা মোদি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মার্চে অ্যালবানিজের ভারত সফরের সময়ও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ভারতীয় দূতাবাসে কোনো ভাঙচুর চালানো হলে বা আক্রমণ করা হলে, সেটা দুই দেশের জন্যই একটা উদ্বেগের বিষয়। অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের ও অস্ট্রেলিয়ান সম্পদের ওপর অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকরদের আক্রমণের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য নয়াদিল্লি কতটা সময় খরচ করবে, সেটা অবশ্যই তাদের বিবেচনা করতে হবে। তবে ক্রমবর্ধমান এই ঘটনাগুলো উদ্বেগের একটা কারণ হয়ে উঠেছে। যদিও রাষ্ট্রপ্রধানের সফরের সময় সেই বিষয়গুলো যখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে, তা মোটেও ইতিবাচক বিষয় নয়। অথবা মোদি দুই দেশের মধ্যে যে গণতন্ত্র, অভিবাসী এবং বন্ধুত্বের যোগসাজশের কথা বলেছেন, সেটির ক্ষেত্রেও তা সহায়ক নয়।