ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস (আইএসসি) হলো একটি বার্ষিক ইভেন্ট, যেখানে দেশের বিজ্ঞান কমিউনিটি একত্রিত হয়ে গবেষণা সংক্রান্ত নানা বিষয় পেশ করে, এই ব্যাপারে আলোচনা করে এবং বিজ্ঞান চর্চা হয়। বিগত সংস্করণগুলোতে প্রধানমন্ত্রী এই ইভেন্টের উদ্বোধন করেছেন এবং ইভেন্টে এক দুজন নোবেল পুরস্কার জয়ী ব্যক্তিত্বও উপস্থিত থেকেছেন। তবে বিগত কয়েক বছরে, আইএসসির সুনাম নষ্ট হয়েছে, তার কারণ এটি নিজেকে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে তুলে ধরেছে, যেখানে সায়েন্টিফিক কমিউনিটির কিছু সদস্য সিউডোসায়েন্টিফিক বা ছদ্ম বিজ্ঞান সংক্রান্ত দাবি পেশ করতে পারেন, বিশেষত যারা অন্যান্য ক্ষেত্রেই হাইপার-ন্যাশনালিস্ট বর্ণনা তুলে ধরার ব্যাপারে আগ্রহী। এবার, আইএসসির ১০৯তম এডিশন, যা আদতে ২০২৪ সালে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর কারণ ডিপার্টমেন্ট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ডিএসটি), ইভেন্টটির ফান্ডের অন্যতম একটি সোর্স এবং আইসসি অ্যাসোসিয়েশন, যেটি ডিএসটি অধীনে একটি অটোনোমাস সংস্থা - এদের মধ্যে বর্তমানের বিবাদের ফলে ইভেন্ট আয়োজন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি সরে এসেছে। অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে তারপর ইভেন্টটির আয়োজক হিসাবে জলন্ধরের লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটিকে বেছে নেওয়া হয়। তবে সংগঠনের তরফে আর্থিক বেনিয়মের অনির্দিষ্ট অভিযোগ সহ, এই সিদ্ধান্তটি ডিএসটির সমালোচনার মুখে পড়ে। শেষ পর্যন্ত লাভলিও সরে দাঁড়ায়, যদিও সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে ডিএসটির বিরুদ্ধে আদালতে যায় অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া অ্যাসোসিয়েশন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যেখানে ২০২৪ সালের ইভেন্টটির আয়োজন করার জন্য অন্য আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে এবং নতুন ভেন্যু খোঁজার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আইএসসির শিডিউলে এই বিরতি আইএসসির প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করার একটি সুযোগ পেশ করেছে। অবশ্যই, কিছু বিখ্যাত বিজ্ঞানী ২০১৪ সাল পরবর্তী ইভেন্টগুলোকে সার্কাস বলে কটাক্ষ করেছেন। তা ভারতে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে একটা নেতিবাচক দিক। তাই অনিশ্চয়তাটা হয়তো তাদের খুব একটা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। তবে আইএসসি প্রত্যেক বছর হাজার হাজার স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়াকে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং গবেষকরাও নিজেদের বক্তৃতা প্রদান করেন, যা শিক্ষা এবং সচেতনা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। শিশু নয়, শুধু তার স্নানের জল ফেলে দেওয়ার আবেদনর মতো বিষয়টি এতটা সোজা বা সহজ নয়। আইএসসিতে অনেক ত্রুটি আছে। এটির বক্তা বাছাই, অসংলগ্ন অ্যাজেন্ডা এবং ঠাসা শিডিউল মোটেও অর্থপূর্ণ এনগেজমেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করে না। ২০১৫ সাল থেকে ভারত সরকারের তরফ থেকে ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার ব্যাপারে চর্চা শুরু হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক, ডিপার্টমেন্ট অব স্পেস অ্যান্ড অ্যাটোমিক এনার্জি এবং ভিজন ভারতী, সংঘ পরিবারের সাথে সংযুক্ত থাকা একটি সংগঠন এই ইভেন্টের আয়োজক। কার্যত, আইএসসির একটি স্বাধীন বা স্বতন্ত্র সংগঠন হওয়া উচিত। প্রাইভেট সেক্টরের সদস্য সহ, জাতীয় সায়েন্টিফিক কমিউনটির সমালোচনামূলক মূল্যায়নের পরেই আরও ঘন ঘন এবং আরও সুসংগঠিতভাবে ইভেন্টের আয়োজন করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে নোবেল পুরস্কারজয়ীদের উপস্থিতি সহ বাকি সব কিছু শোভা বর্ধক ছাড়া আর কিছু নয়।