সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে একটি মামলার কার্যপ্রক্রিয়াতে কিছু রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ ফুটে উঠেছে। বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে হেনস্থা করার জন্য রাজভবনের ক্ষমতাধারীরা যেভাবে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকার সুযোগ নিয়ে বিলে সম্মতি প্রদান করতে অযথা বিলম্ব সৃষ্টি করেন, সেই বিষয়ে সমাধান খুঁজতে রাজ্যগুলো শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর.এন রবির প্রসঙ্গে আদালত যখন প্রশ্ন তোলে, “তিন বছর ধরে রাজ্যপাল কী করছিলেন?”, তখন এই বিষয়টিতে আলোকপাত করা হচ্ছিল যে, বিলম্বের ব্যাপারে আদালতে আগের একটি মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণের পরই রাজ্যপাল বাকি থাকা বিলগুলোর কাজ সম্পন্ন করেছেন। বিক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার যতক্ষণ না আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে, ততক্ষণ বিলে সম্মতি প্রদানের ব্যাপারে রাজ্যপালের অনীহা একপ্রকার ইচ্ছাকৃত বলেই মনে হয়। ১০টি বিলে রাজ্যপাল নিজের সম্মতি স্থগিত করে রাখা এবং দ্বিতীয়বারের জন্য বিলগুলো আইনসভায় উত্তীর্ণ করে রাজ্যের জবাবের ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর এই শুনানিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হলো যে, এই প্রসঙ্গে, আইনসভার দ্বারা উত্তীর্ণ বিলগুলো পেশ সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০০ নিয়ে বেশ ভালো পরিমাণ পরীক্ষার একটা সুযোগ আছে। আদালতের বক্তব্য, পুনরায় উত্তীর্ণ হওয়া বিলগুলোতে রাজ্যপাল নিজের সম্মতি প্রদানে অসম্মত হতে পারেন না। আদালতের এই পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী রাজ্যপাল রবি যদি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তাহলে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বর্তমানের জটিলতা কেটে যাবে। তবে বিষয়টির সেখানেই সমাপ্তি হওয়া উচিত নয়।
বৃহত্তর বিষয় হলো, আইনের সীমারেখা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। রাজ্য আইনসভায় তর্কবিতর্ক থেকে একটা আভাস পাওয়া যায় যে, কোনো বিলে সম্মতি প্রদান করা বা তা ফেরত পাঠানোর কাজ শুধুমাত্র মন্ত্রীসভার পরামর্শ সাপেক্ষেই হতে হবে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক রাজ্যপালই নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজকর্ম করে চলেছেন। বিশেষত রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য যে বিলগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে এটি বেশি প্রাসঙ্গিক। এবার সুপ্রিম কোর্টকে একটি কর্তৃত্বমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, যাতে যে সব রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সাথে সহযোগিতা করতে রাজি হন না, তারা যেন আইনের খামতিকে কাজে লাগাতে না পারেন। এর পাশাপাশি, এটিও ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন, কোনো বিলে সম্মতি প্রদান স্থগিত রাখা মানে কি সেটি খারিজ করে দেওয়া, না কি আইনসভার পুনর্বিবেচনার জন্য একটি বার্তা সহ বিল আকারে ফেরত পাঠিয়ে সেটির ফলো আপ করা, যেমনটা অনুচ্ছেদ ২০০-তে প্রথম সংস্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থানটিতে বলা আছে, রাজ্যপাল পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠানো এবং আইনসভা দ্বারা পুনরায় অধিগ্রহণ করা যে কোনো বিলে নিজের সম্মতি স্থগিত করে রাখতে পারেন না। এই সমস্যাটি রাজ্যপালদের ভূমিকার ব্যাপারে ধোঁয়াশার বিষয়টিও হাইলাইট করেছে। পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের মূল ভাবধারায় থাকা ‘সাহায্য এবং পরামর্শের’ ক্লজটি রাজ্যপালদের নিজস্ব বিবেচনাক্রমে প্রয়োগ করা ক্ষমতার মাধ্যমে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে। যদিও আদতে এই ক্ষমতটি রাজ্যপালদের প্রয়োগ করার কথা ভেবে তৈরি করা হয়নি। এই ধরনের আইনের সংস্থানের পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।