গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পাল্টা হিসাবে গাজা ভুখণ্ডে বোমাবর্ষণ শুরু করে ইজরায়েল। এই ঘটনার দুই মাস পরে, বিশ্বের অন্যান্য ১৫২টি দেশের সাথে, রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় (ইউএনজিএ), এই বোমাবর্ষণ বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানে ভারত যোগ দিয়ে, এই মর্মে আনা একটি রেজলিউশনের পক্ষে ভারত ভোট দিয়েছিল। রেজলিউশনের দাবি ছিল মানবতার খাতিরে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা, নিঃশর্তে সব পণবন্দীদের মুক্তি দেওয়া এবং মানবিক নানা সুযোগ-সুবিধায় অ্যাক্সেস সুনিশ্চিত করা। ভারতের এই ভোট, আগের অবস্থানের থেকে আলাদা। গত ২৬ অক্টোবর, ইউএনজিএ-তে অনুরূপ একটি রেজলিউশন পেশ করা হয়েছিল, যেটিতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়। ততদিনে ৮,০০০ গাজা-বাসীর মৃত্যু হলেও, ভারত এই রেজলিউশনে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকে। ভারত সরকার এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারতের জিরো-টলারেন্স নীতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার কারণ আগের রেজলিউশনে ৭ অক্টোবরের আক্রমণের স্পষ্টভাবে নিন্দা করা হয়নি। এদিকে, ডিসেম্বরের ১২ তারিখে ইউএনজিএ-তে যে রেজলিউশন উত্তীর্ণ করা হয়েছে, তাতেও সরাসরি সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। যদিও ভারত এটির অনুকূলে ভোট দিয়েছে। এর পিছনে কী যুক্তি রয়েছে, সরকারের তরফ থেকে এখনও তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি, তবে এখানে একাধিক কারণ থাকতে পারে: মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি হয়েছে, আপাতত মৃতের সংখ্যা ১৮,০০০ এবং প্রায় ৯০ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে, যা সর্বোচ্চ। সমগ্র জনসংখ্যার ৮০%-এরও বেশি মানুষ গৃহহীন। ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় সঙ্গী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের আনুমানিক হিসাব থেকে বলেছে যে ইজরায়েলের মোতায়েন করা ২৯,০০০ এয়ার-টু-গ্রাউন্ড মিউনিশনের প্রায় অর্ধেকই এখনও পর্যন্ত “অনির্দেশিত” বা নির্বিচারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইজরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল হামাসকে খতম করা এবং পণবন্দীদের মুক্ত করা। যদিও এখন তারা গাজায় নির্বিচারে আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি আরও অনেক এলাকায় দখলদারি চালিয়েছে। ১০০ জনেরও বেশি পণবন্দী এখনও হামাসের হেফাজতে রয়েছে। তৃতীয়ত, ভারতের জনসাধারণের মতামত সহ, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের মতামত ইজরায়েলের জন্য সমবেদনা থেকে এখন তাদের চালানো তাণ্ডবের নিন্দা নিয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে। ভারত আগে ভোটদান থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে দক্ষিণ এশিয়া এবং গ্লোবাল সাউথে একা হয়ে পড়েছিল। এবার প্যালেস্টাইন এবং গাল্ফ অঞ্চলের দেশগুলোর অনুরোধের ফলে নয়াদিল্লি নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের কথা নিয়ে ভাবছে।
ইউএনজিএ-তে ভারতের ভোটকে এখনই তাদের আগের অবস্থানের উল্টো ছবি এবং যেখানে চিরাচরিতভাবে শান্তির আহ্বান করা হয়েছে, যেখানে সংঘাতের ব্যাপারে মূল অবস্থানের বিপরীতে চলে যাওয়া হিসাবে ধরে নেওয়াটা হয়তো সঠিক হবে না। ইজরায়েল ইতিমধ্যেই ইউএনজিএ রেজলিউশন খারিজ করে দিয়েছে। তাই আগামীতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য ভারত কী ভূমিকা গ্রহণ করে, এখন সেটাই দেখার বিষয়। সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পর ভারত প্রমাণ করেছে যে তারা ইজরায়েলের প্রকৃত বন্ধু। তবে ব্যাপক বোমাবাজি চালানোর ফলে নেতানিয়াহু সরকার যে জটিল জায়গায় নিজেদের নিয়ে গিয়েছে, এই অবস্থাতে ভারতকে অবশ্যই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তার কারণ ইজরায়েলের এই ধরনের কার্যকলাপ থেকে দীর্ঘস্থায়ী আঞ্চলিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।