অসন্তোষ সৃষ্টিকারী বিভাজন

যে রাজনীতিবিদরা উত্তর-দক্ষিণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেন, তাদের ছাড়াই ভারত চলতে পারে

December 09, 2023 03:15 am | Updated 03:15 am IST

উত্তর ভারতীয় রাজ্যগুলোর ব্যাপারে দ্রাবিড়া মুন্নেত্রা কাজহগম দলের সাংসদ এস. সেন্থিলকুমার লোকসভায় যে মন্তব্য করেছেন, তা মোটেও যথাযথ নয়। যদিও এই আইন প্রণেতার মন্তব্যটি রেকর্ড থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। সহনাগরিকদের বিশ্বাস, খাদ্যাভ্যাস বা সাংস্কৃতিক প্রথা নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করা গোঁড়ামি ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতের মতো একটি বিশাল দেশে অঞ্চল ভেদে রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই বিশাল ভূখণ্ডে অনেক ভারসাম্যহীনতা রয়েছে; যেমন স্বাক্ষরতা এবং শিক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদ, বাণিজ্য রুটে অ্যাক্সেস এবং ডেমোগ্রাফিক গঠন। এই ভারসাম্যহীনতাগুলো দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যেও প্রতিফলিত হয়ে থাকে। কিছু কিছু অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত। আবার কিছু কিছু অঞ্চল দেশের রাজনৈতিক চিত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখে। ভারসাম্যহীনতাগুলো বাদ দিলে ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি এবং খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে আমাদের দেশে বিপুল বৈচিত্র রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এবং সবচেয়ে বৈচিত্রময়, গণতান্ত্রিক দেশকে শক্ত পায়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য সক্ষম করে তুলতে গিয়ে, রাষ্ট্র নির্মাতারা ভারসাম্যহীনতা এবং বৈচিত্রের এই সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছিলেন। তবে ভারত এই সব ভারসাম্যহীনতা এবং বৈচিত্র পরিচালনা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবুও এখনও যে এই প্রসঙ্গে অনেক কাজ বাকি আছে, তা অস্বীকার করা যায় না। আঞ্চলিক পরিচয় এবং ভারসাম্যগুলো লুকিয়ে ফেলা যাবে না বা সেগুলোকে জোর করে আড়াল করা যাবে না, যদি না একটি কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরাচারী রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা করা হয়।

অবাঞ্ছিত মন্তব্যের জন্য সাংসদ এবং তার দল ইতিমধ্যেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। এই অধ্যায়টি নিয়ে এবার আলোচনা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। হিন্দি-ভাষী রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে ভারতীয় জনতা পার্টির জয়, তেলেঙ্গানাতে কংগ্রেসের জয় প্রসঙ্গে, উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর রাজনীতি সংক্রান্ত পছন্দের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা বোঝাতে গিয়ে তিনি ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেন। ভারতে বিভিন্ন আঞ্চলিক গঠন সম্পন্ন জোট এবং রাজনৈতিক দল দেখা গিয়েছে, যা শাসকের ভূমিকা পালন করেছে। তবে উত্তরে বিপুল জনসংখ্যার সুবাদে, দেশের প্রশাসন পরিচালনায় উত্তরের মতামত সর্বদা বেশি জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বিভাজন সৃষ্টিকারী উত্তর-দক্ষিণের মধ্যে এই পার্থক্যের ব্যাপার তুলে ধরাটা ভিত্তিহীন এবং বিপজ্জনক। যদিও বেশ কিছু ভারাসাম্যহীনতা রয়েছে, যা বাস্তবে অস্বীকার করা যায় না এবং সেগুলো যথাযথ। দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলো অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে, উত্তর এবং পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই ট্রেন্ডগুলো এমনভাবে স্বীকার করতে হবে, যা শত্রুতার একটি কারণের বদলে যেন দেশের অগ্রগতিতে সাহায্য করতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে বিভিন্ন ধর্মীয় এবং জাতপাত সংক্রান্ত কমিউনিটিতেও উন্নয়নের পরিণাম বা প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল এবং কমিউনিটির মধ্যে উন্নয়ন সংক্রান্ত পার্থক্য ক্রমশ বর্ধিত হওয়া এবং লোকসভা আসনের সম্ভাব্য দেশব্যাপী ডিলিমিটেশনের কারণে এই চ্যালেঞ্জগুলো আরও বেড়ে যাওয়ার একটা বিপদ রয়েছে। ভারসাম্যহীনতা সংক্রান্ত এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না খুঁজে দেওয়া দরকার। এটা অত্যাবশ্যক যে এই আলোচনাগুলো যেন জ্ঞাত এবং সম্মানজনকভাবে হয়; এবং এগুলোর মধ্যে যেন কুসংস্কার ও শত্রুতা না থাকে।

0 / 0
Sign in to unlock member-only benefits!
  • Access 10 free stories every month
  • Save stories to read later
  • Access to comment on every story
  • Sign-up/manage your newsletter subscriptions with a single click
  • Get notified by email for early access to discounts & offers on our products
Sign in

Comments

Comments have to be in English, and in full sentences. They cannot be abusive or personal. Please abide by our community guidelines for posting your comments.

We have migrated to a new commenting platform. If you are already a registered user of The Hindu and logged in, you may continue to engage with our articles. If you do not have an account please register and login to post comments. Users can access their older comments by logging into their accounts on Vuukle.