ইন্ডিয়া এবং ভারত, উভয় শব্দই দশকের পর দশক ধরে দেশপ্রেমীদের মধ্যেই একই আবেগের জন্ম দিয়েছে। তবে বর্তমানে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এগুলোকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি কিছু সরকারি চিঠিপত্র এবং নথিতে ইন্ডিয়ার বদলে ভারত শব্দটি ব্যবহার করেছে। সরকারের প্রতিনিধিরা এও আভাস দিয়েছেন, আগামীতে এটি আরও বেশি ব্যবহার করা হবে। ভারতের সংবিধানে দেশের নামের প্রসঙ্গে ‘ইন্ডিয়া, মানে ভারত,...’ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত এই উভয় শব্দ কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গ অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়েছে। ভারত শব্দটির সাথে যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন জড়িয়ে আছে, তা নিয়ে কোনো দিনও সন্দেহের অবকাশ ছিল না। তবে বর্তমানে এই শব্দটি নিয়ে যে হাইপ তৈরি করা হয়েছে, সেটির পিছনে থাকা প্রচারটি এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে সেখানে বলা হচ্ছে ভারত এবং ইন্ডিয়া পাশাপাশি থাকতে পারে না। এই তত্ত্বের সমর্থকদের মতে, ইন্ডিয়া শব্দটি বিদেশের চাপানো একটি শব্দ। তাই জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় সম্মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটি যথাযথ নয়। বিভিন্ন প্রাচীন সোর্সের সাথে লিঙ্ক করা অনুযায়ী, ভারত শব্দটি দেশটির বর্তমানের ভৌগলিক সীমানার বাইরেও নিজের অস্বিত্বের দিকে ইঙ্গিত করে। সেই অর্থে, উভয় শব্দই ভারতের রাষ্ট্র-গঠনের সফরের পরিণাম। বহু জনগোষ্ঠী, ভাষা ও জেনেটিক বৈচিত্রে পরিপূর্ণ একটি দেশে এবং মানব ইন্টারঅ্যাকশনের ক্রস-কারেন্ট ও মাইগ্রেশনের ফলাফলের প্রেক্ষাপটে গঠিত দেশ থেকে তথাকথিত এই বিদেশী শব্দ হটিয়ে দিলে এটা নিয়ে শুধুমাত্র নতুন করে একটা আলোচনা বা বিতর্ক দেখা দেবে। তাছাড়া এর আর কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।
দেশে এই যে প্রহসনমূলক কোলাহল তৈরি হয়েছে, তার সমাপ্তি ঘটার প্রয়োজন ছিল। তবে বিরোধী শিবিরের দায়সারা প্রতিক্রিয়ার ফলে দেশের সামনে এটি বরং একটি মৌলিক পরিচয়ের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দীর্ঘদিন ধরেই ইন্ডিয়ার বদলে ভারত ব্যবহারের জন্য দাবি জানাচ্ছিল। তবে বিরোধী শিবির নিজেদের জোটের নাম ইন্ডিয়া রাখার ফলে হয়তো বিজেপি তড়িঘড়ি দেশের নাম বদলাতে উদ্যোগী হয়েছে। সরকারের এই নাম পরিবর্তনের খেলা দেশের শক্তি ও গর্বকে প্রদর্শন করার বদলে বরং দেশের আত্মবিশ্বাস ও সফ্ট পাওয়ারের ওপর আঘাত করছে। বহু ভারতীয় ভাষা জুড়ে জনপ্রিয় সংস্কৃতি, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক রীতি ও সাহিত্যের অংশ হলো ভারত। একইভাবে দেশে এবং দেশের বাইরে থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষও ইন্ডিয়া শব্দটি ব্যবহার করেন। তারাও দেশের উন্নতি চান। এই নামবাচক বিশেষ্যগুলোর প্রসঙ্গ এবং চূড়ান্ত সীমারেখা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। ঠিক সেই কারণে ভারত এবং ইন্ডিয়ার মধ্যে একটির বদলে আর একটি শব্দ চাপিয়ে দেওয়াটা সমীচীন হবে না। দুটি শব্দের ক্ষেত্রেই মূল যে অর্থ বলার চেষ্টা করা হয়, তা একই বা অভিন্ন। দুটি নামের অপ্রয়োজনীয় তুলনামূলক বিশ্লেষণ একটি ভুল সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের সাধনায় অংশীদারদের মধ্যে থাকা বন্ধনকে প্রভাবিত করা উচিত নয়। ইন্ডিয়া এবং ভারত যেভাবে দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি অবস্থান করছিল, তাদেরকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া হোক।