যে তিনটি রাজ্যে বিজেপি সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে, সেখানে তারা একটি প্রজন্ম সংক্রান্ত পরিবর্তন বাস্তবায়ন করেছে। ছত্তীসগঢ়ে বিষ্ণু দেও সাইকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নেওয়াটা তাই খুব একটা অবাক করার মতো বিষয় নয়, যেটা মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের ক্ষেত্রে ঘটেনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং দলের রাজ্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার অভিজ্ঞতার জন্যই তিনি বাকিদের থেকে আলাদা গুরুত্ব পেয়েছেন; এছাড়া তিনি উপজাতি কমিউনিটির একজন সদস্যও বটে। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এক বিশ্বস্ত ব্যক্তি। লোকসভা নির্বাচনের আগে তার নিয়োগের ফলে রাজ্যটিতে বিজেপির পায়ের তলার মাটি আরও মজবুত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। দলটি উত্তরের উপজাতি অঞ্চল সরগুজার ১৪টি আসনের সবকটিতেই জয়ী হয়েছে এবং উপজাতিদের কাছে পৌঁছানোর অভিযান তারা জারি রেখেছে। দুজন ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে অরুণ সাও, যিনি গত বছর স্টেট প্রেসিডেন্ট হিসাবে সাইয়ের স্থান দখল করেছিলেন, তিনি সমতল অঞ্চলে শক্তিশালী সাহু ওবিসি কমিউনিটির একজন নেতা। বিজেপি এবং কংগ্রেস, উভয় দলই এই কমিউনিটিকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। এই নেতা বিলাসপুর অঞ্চলের বাসিন্দা, যেখানে দুই দলের মধ্যে সবথেকে বেশি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। ঠিক তেমনি, দ্বিতীয় ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিজয় শর্মা, ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের একজনকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমবারের বিধায়ক শর্মা কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতা এবং পূর্ববর্তী সরকারের একমাত্র মুসলমান মন্ত্রী মহম্মদ আকবরকে পরাজিত করেছেন।
বিজেপিকে মন্ত্রীসভার আরও ১০টি শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে এবং তারা এক্ষেত্রে জাতপাত ও লিঙ্গভিত্তিক বিষয়গুলো নিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করবে। নতুন সরকারের হাতে অনেক কাজ রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন করার জন্য তাই তারা সময় নষ্ট করতে পারবে না। এই কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ অঞ্চলের দরিদ্রদের জন্য ১৮ লক্ষ বাড়ি নির্মাণ করা, পূর্ববর্তী বিজেপি সরকারের শেষ দুই বছর, অর্থাৎ ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮-তে ধানের উপর বকেয়া থাকা বোনাস প্রদান করা, মাতৃ বন্ধন যোজনার অধীনে প্রত্যেক বছর সব বিবাহিত মহিলাকে ১২,০০০ টাকা দেওয়া এবং ভুপেশ বাঘেল সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপি দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছিল, সে ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করা। এছাড়া নতুন সরকারকে চাকরি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭৬% কোটা প্রদানকারী রিজার্ভেশন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তার সমাধান করতে হবে। পূর্ববর্তী বিধানসভা এগুলো সর্বসম্মতভাবে উত্তীর্ণ করেছিল, যা পরে রাজভবনে আটকে যায়। তবে বিজেপি এবার ক্ষমতায় আসার ফলে, রাজ্যপালের সাথে আগের সরকার যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল, এবার তেমনটা হবে না বলেই মনে হচ্ছে। তাই প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়িত করলে, নতুন উপজাতি মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়তে পারে। কংগ্রেস সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসাবে চর্চায় থাকা স্বামী আত্মানন্দ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কলেজের ব্যাপারেও নতুন সরকারকে মূল্যায়ন করতে হবে। শহরাঞ্চলের ভোটাররাও বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন এবং নতুন সরকারকে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করার দিকেও নজর দিতে হবে।