২০২২ সালের মে মাস। কংগ্রেস উদয়পুরে নিজেদের অধিবেশনে অনেক চিন্তাভাবনার পর দলের ওয়ার্কিং কমিটিতে (সিডব্লুসি) সামাজিক প্রতিনিধিত্বের মতো একটি উচ্চাকাঙ্খাপূর্ণ লক্ষ্য অর্জন করার টার্গেট নেয়। তবে সেটা বাস্তবায়িত করা মোটেও সহজ হবে না। ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) রায়পুর অধিবেশনে দলের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গেকে অনুমোদন প্রদান করার প্রায় ছয় মাস পর, অবশেষে রবিবার তিনি নতুন সিডব্লুসি ঘোষণা করেন, যা কাকতালীয়ভাবে ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকী। নবীন এবং প্রবীণের সংমিশ্রণে খাড়গে এমন একটি তালিকা তৈরি করেছেন, যা দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংগঠনে বৈচিত্রকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। শীর্ষ পদের জন্য ২০২২ সালের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুর তালিকায় স্থান পেয়েছেন, যা দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে আরও মজবুত করেছে এবং এটি দলের মধ্যে সংশয়বাদীদেরকে উৎসাহজনক ইঙ্গিত প্রদান করছে। আমন্ত্রিতদের বাদ দিয়ে, সিডব্লুসির অর্ধেক সদস্যই তপশিলি উপজাতি, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণী, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু কমিউনিটির সদস্য বা মহিলা। উদয়পুরের অধিবেশনে যে স্বপ্নের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল, ঠিক সেটাই বাস্তবে রূপায়িত করা হয়েছে। তবে আমন্ত্রিতদের সংখ্যা হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, ‘৫০-এর মধ্যে ৫০’ বয়স সংক্রান্ত শর্ত পূরণ করা হলেও, উচ্চবর্ণ এবং সংখ্যালঘুদের দিকেই সামাজিক গঠনমূলক কাঠামোর পাল্লা ভারী। দলের মাঝারি মাপের অনেক নেতাও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যেমন পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ৬০ বছরের এক দলিত নেতা চরণজিত সিং ছান্নি এবং নির্বাচন-মুখী মধ্যপ্রদেশের ৪৯ বছর বয়সী ওবিসি নেতা কমলেশ্বর প্যাটেল। এছাড়া চিরস্থায়ী আমন্ত্রিত হিসাবে ঠাঁই পেয়েছেন তেলেঙ্গানার ৬৪ বছর বয়সী দামোদর রাজা নরসিমা।
গান্ধী পরিবারের তিন সদস্য — সোনিয়া, রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা সক্রিয় থাকা অবস্থাতেই কর্তৃত্ব প্রয়োগের মতো কঠিন কাজটা খাড়গেকে করতে হবে। তবে তিনি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে। এছাড়া এই তালিকার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, যে সমস্ত রাজ্যগুলোতে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন, তাতেও দলের নজর রয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের এক প্রভাবশালী ওবিসি নেতা তামরাধওয়াজ সাহু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তার চ্যালেঞ্জের শচীন পাইলট এবং উপজাতি নেতা মহেন্দ্রজিত সিং মালব্যকে সিডব্লুসিতে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে দলের ঐক্য আরও মজবুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অসন্তুষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীগুলোকে দল সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে এবং বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্রোহী নেতাদেরকেও শান্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দলের নতুন সংগঠনটি ভারতের ভৌগলিক এবং সামাজিক গঠনের দিক থেকে প্রতিনিধিত্বমূলক হয়ে উঠেছে। তবে আগামী দিনে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। তবুও বলতে হয়, নতুন সিডব্লুসিতে কল্পনা এবং আপস, উভয়ই ফুটে উঠেছে। শুরুটা ভালো হয়েছে। বৈচিত্রময় একটা দেশের প্রকৃত প্রতিনিধি হয়ে ওঠার জন্য কংগ্রেসকে আরও আরও কাজ বাকি। এছাড়া ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচনের জন্য কৌশল নির্মাণ, রাজনৈতিক যোগাযোগের উন্নতি এবং বিরোধী শিবিরের মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠার জন্যও দলকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।