ভারতের বিভিন্ন অংশে আর্থসামাজিক সমীকরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ফলে এমন সমস্ত কমিউনিটি সংরক্ষণের দাবি তুলেছে, যারা রাজনৈতিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত এবং তাদেরকে সাধারণত সমাজের “পিছিয়ে পড়া” শ্রেণী হিসাবে শনাক্ত করা হয় না। মহারাষ্ট্রে মারাঠা সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের দাবিতে বিক্ষোভ এমনই একটি উদাহরণ। মহারাষ্ট্রে এই সম্প্রদায়টির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। ১৯৬৭ সাল থেকে রাজ্যের বিধায়কদের মধ্যে ৩৫% এবং ১৮ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ১২ জনই এই সম্প্রদায়ের। রাজ্যের অধিকাংশ চিনির কারখানা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি, রাজ্যের ৭৫%-এরও বেশি চাষযোগ্য জমির মালিকানা থাকার কারণে গ্রামাঞ্চলে সাধারণত এই সম্প্রদায়টি অর্থনৈতিক দিক থেকেও প্রভাবশালী। রাজ্যে ২০১১-১২ সালের ইন্ডিয়া হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সার্ভে (আইএইচডিএস)-এর ডেটা থেকে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের তুলনায় মারাঠাদের মাথা পিছু খরচ করার ক্ষমতা কম; মারাঠাদের মধ্যে দারিদ্র অন্যান্য অগ্রসর কমিউনিটির সাথে তুলনাযোগ্য এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতির তুলনায় অনেক কম এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর তুলনাতেও অনেক কম। ২০১৮ সালে কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষায় মারাঠাদেরকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর অধীনে যে ১৬% কোটা প্রদান করা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট ২০২১ সালে কেন তা বাতিল করে দেয়, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তবুও, কেন এই দাবি করা হচ্ছে, তা বুঝতে অসুবিধা হবে না। তুলনামূলকভাবে আধিপত্য থাকলেও, রোজগার এবং শিক্ষাগত অর্জনের প্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইন্ট্রা-কমিউনিটি প্রভেদ রয়েছে। আইএইচডিএস সমীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছে যে, সমতুলদের মধ্যে সম্প্রদায়টির সর্বোচ্চ গড়পড়তা মাথা পিছু রোজগার হলো ৮৬,৭৫০ টাকা, অন্যদিকে সমতুলদের মধ্যে সর্বনিম্ন মাথা পিছু রোজগার এই দশভাগের একভাগ। রাজ্যে কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘদীন ধরে চলমান সঙ্কটের মধ্যে তুলনামূলকভাবে দরিদ্রতর মারাঠাদের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে জীবীকার ক্ষেত্রে আধিপত্য থাকলেও, এই বৈষম্যের কারণে মারাঠাদের মধ্যে সংরক্ষণের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। একনাথ শিণ্ডের সরকার ইতোমধ্যেই এই দাবির প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। বিচারপতি সন্দীপ শিণ্ডের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা সব মারাঠাকেই কুনবি সার্টিফিকেট প্রদানের কাজে গতি আনতে সাহায্য করবে, যাতে ওবিসিদের অংশ হিসাবে মারাঠারা সুবিধা পেতে পারেন। তবে এই পদক্ষেপটি আবার ক্ষমতাসীন জোটের নেতা সহ ওবিসি নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে। তাদের দাবি, সরকার এই কমিটি বাতিল করুক। সাংবিধানিক সংস্থানের ভিত্তিতে, কোন গোষ্ঠীর প্রকৃত পক্ষে সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া উচিত তা খুঁজে পেতে, সংরক্ষণ বাস্তবায়ন এবং এর পরিণামের মূল্যায়ন করার জন্য রাজ্যজুড়ে সামগ্রিকভাবে আর্থ-সামাজিক দিক থেকে সমীক্ষা চালানো প্রয়োজন। বিক্ষোভের মুখে শুধুমাত্র দায়সারা প্রতিক্রিয়া দিলে তাতে কাজ হবে না। আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, সামগ্রিক কর্মসংস্থানের ছবির প্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে যে সরকারি চাকরির সুযোগ ক্রমশ কমছে। তাই দরিদ্র মারাঠাদের অগ্রগতির জন্য শুধুমাত্র সংরক্ষণের হাতিয়ার যথেষ্ট নয়।