আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিলি করার স্কিম বর্ধিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাতেই হবে, তার কারণ এটি অসহায় জনগণের একটা বড় অংশকে খাদ্য সুরক্ষা প্রদান করা চালিয়ে যাবে। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন (এনএফএসএ) এনটাইটেলমেন্টের ভিত্তিতে, অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা (যারা সবচেয়ে গরীব) এবং অগ্রাধিকারযুক্ত পরিবার ক্যাটাগরি অধীনে, প্রায় ৮০.৪ কোটি মানুষ প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা (পিএমজিকেএওয়াই) থেকে উপকৃত হবেন। তারা প্রত্যেক মাসে পাঁচ কেজি করে চাল বা গম বা না ভাঙানো খাদ্যশস্য যেমন পাচ্ছিলেন, তা পেতে থাকবেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় সর্বভারতীয় স্তরে বিনামূল্যে খাদ্যশস্যের সংস্থান চালু করা হয়, যদিও তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে এই ধরনের স্কিম আগে থেকেই ছিল। সেই সময় এনএফএসএ সুবিধাভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং পিএমজিকেএওয়াই নামকরণ স্থির করা হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১,০১৫ লক্ষ টন খাদ্যশস্য ৩.৪৫ লক্ষ কোটির সাবসিডি খরচ করে বিতরণ করা হয়। ২০২২ সালের শেষে কেন্দ্রীয় সরকার বর্ধিত এনটাইটেলমেন্ট বাতিল করার পাশাপাশি আরও এক বছরের জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে সাধারণ এনটাইটেলমেন্ট অধীনে বিনামূল্যে খাদ্যশস্যের কথা ঘোষণা করে।
তবে এই সর্বশেষ পদক্ষেপটি যেভাবে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা থেকে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ছত্তীসগঢ়ের দুর্গ এলাকায় একটি নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণাটি করেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের সমান হিসাবে বিবেচনা করা উচিত, তার কারণ মোদী নিজের পদমর্যাদার সুযোগ নিয়ে প্রকল্পটি বর্ধিত করার ঘোষণা করেছেন (পরবর্তী মাসের শেষে ল্যাপসের কারণে)। তার এমন তাড়াহুড়ো করার কোনো কারণ ছিল না। নির্বাচনী জনসভার বদলে বরং ৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প বর্ধিতকরণের কথা ঘোষণা করতে পারতেন। তাই আপাতভাবে মনে হচ্ছে যে ভোটারদের মন জয় করতে এবং রাজনৈতিক ফায়দা পেতেই নির্বাচনী জনসভা থেকে এই ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া পিএমজিকেএওয়াইয়ের পূর্বেকার অবতারের সৌজন্যে ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হয়েছে বলে একটা ধারণা প্রচলিত আছে। এমনকি কংগ্রেস, যারা এই ঘোষণাটিকে নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যা এবং ক্রমবর্ধমান অসাম্যের ইঙ্গিত হিসাবে সমালোচনা করেছে, তারাও কোনো ত্রুটি খুঁজে পায়নি। প্রকল্পটি গোটা দেশের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এবং নির্বাচনমুখী শুধুমাত্র এই পাঁচটি রাজ্যের জন্য নয় — এই রাজ্যগুলোতে মোট সুবিধাভোগীর প্রায় ১৭% রয়েছেন। ফিস্ক্যালের দিক থেকে বলতে গেলে, এই বর্ধিতকরণ থেকে গুরুতর কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না, তার কারণ খাদ্য সংক্রান্ত সাবসিডি বিলের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার মোট রোজগারের মাত্র ৭.৫% মতো অর্থ খরচ হয়। গড়পড়তা হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, গত সাত বছরে, চাল এবং গমের দাম বছরে ৫.৭% করে বেড়েছে। এছাড়া এই বর্ধিতকরণ ঘোষণা করার ফলে বছরে প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা মতো খরচ হবে, যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারকে গণবন্টন ব্যবস্থায় থাকা খামতি বা বেনিয়মগুলোর সমাধান করতে হবে, যাতে এই সুবিধার বর্ধিতকরণ থেকে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা উপকৃত হতে পারেন।