ভবিষ্যতের ব্যাপারে মানুষ সাধারণত আশাবাদী হয়ে থাকে। বর্তমানে শত দুঃখ-কষ্ট থাকলেও, আগামী দিন ভালো হবে, এই ইতিবাচক ভাবনায় ভর করে সব কিছু সহ্য করা যায়। তাই এই আশার সম্ভাবনার ওপর আঘাত এলে, তা অসহনীয় হয়ে ওঠে। সম্প্রতি তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলি জেলার নানগুনেরি শহরে এরকমই একটা ঘটনা ঘটেছে। সেখানে এক দলিত কিশোর এবং তার উপর তাদেরই উচ্চবর্ণের বন্ধুরা নৃসংশভাবে আক্রমণ চালায়। প্রান্তিক জনজাতির একটা গোটা প্রজন্মের কাছে এটি আশার ব্যর্থতা বলা যায়। রাজ্যে দলিতদের ওপর অত্যাচারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। রাজ্যের একদম দক্ষিণ প্রান্তে কমিউনিটিগুলোর মধ্যে বহুকাল ধরে অসন্তোষ জমে রয়েছে। সেই কারণে মাঝে মাঝে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। দলিত এলাকায় বাড়িতেই ওই কিশোর এবং তার বোনের উপর তাদেরই সহপাঠী কিছু কিশোর আক্রমণ চালায়। হামলাকারীরা হিন্দু বলে জানা গিয়েছে। ওই দলিত কিশোর ও তার বোনকে আক্রমণ করার পর, তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে তারা পালিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, এক অভিযোগকে ঘিরে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। এক দলিত বালক নিজের এক সহপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল যে, তাকে ‘নিচু-জাত’ বলে বার বার হেনস্থা করা হচ্ছে। সেই অভিযোগের প্রতিশোধ নিতে এই ঘটনা ঘটনো হয় বলে জানা গিয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে আগেই সতর্ক করেছিল। তবে এই পদক্ষেপে ক্ষিপ্ত হয়ে, ইন্টারমিডিয়েট কাস্ট কমিউনিটির তিন বালক ৯ আগস্ট রাতে ওই দলিত ভাই-বোনের উপর হামলা চালায়। আক্রান্ত বালকটির হাতে জটিল সার্জারি করা হয়েছে। তার বোন এখনও হাসপাতালে ভর্তি। আক্রমণকারী ও তাদের সহযোগীদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে একটি সরকারি পর্যবেক্ষণ হোমে রাখা হয়েছে।
জাতপাত সংক্রান্ত এই অদম্য ঘৃণার ধরণ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যেভাবে জাতপাত নিয়ে গর্বের বীজ বপন করা হচ্ছে, তা জাতপাত মুক্ত সমাজ গঠনের মূলেই আঘাত করছে। স্কুলে অন্য জাতের থেকে দলিত শিশুদেরকে আলাদা করার জন্য জাতিগত পৃথকীকরণের ব্যবহার, দক্ষিণের গ্রামগুলোতে এলাকা চিহ্নিত করার জন্য জাতিগত বর্ণ ব্যবহার করার মতো আদিম পন্থার প্রচলন, ঘন ঘন সংঘাত এবং স্থানীয় রাজনৈতিক/জাতিগত গোষ্ঠী যেভাবে যুবদেরকে নিজেদের কাজে লাগায়, তা থেকে এই অঞ্চলের গভীর সমস্যাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জাতিগত বৈষম্য দূর করতে এবং উন্নয়ন কাঠামোর মধ্যে সমস্ত নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পেরিয়ার অনুপ্রাণিত দ্রাবিডিয়ান মডেল বাস্তবে যে সুষমভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। জাতিগত সংঘাতের সমস্যা দূর করার জন্য এখনও পর্যন্ত সাময়িক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এই সমস্যার মূল যে কারণ, তা উপড়ে ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতিগত পার্থক্য দূর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিতে সরকারের তরফ থেকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে. চান্দ্রুর নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে। নানগুনেরির ঘটনা থেকে আমরা যদি জাগ্রত না হই, তা সত্যই একটা খারাপ ব্যাপার হবে। জাতিগত শ্রেণিবিন্যাস ধ্বংস করতে এবং শান্তি, সাম্য ও প্রত্যাশাকে ফিরিয়ে আনতে এই ঘটনাটি অনুঘটকের মতো ভূমিকা পালন করা উচিত।