সাহিত্য সংক্রান্ত সীমানা বহুমুখী হওয়া উচিত এবং বহু বছর ধরে, ২৪টি ভারতীয় ভাষায় লেখকদেরকে যেভাবে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রদান করে চলেছে, এই আলোকেই তার ওপর দৃষ্টিপাত করতে হবে। এই বছর অ্যাকাডেমি নয়টি কবিতার বই, ছয়টি উপন্যাস, পাঁচটি ছোট গল্প, তিনটি রচনা এবং একটি সাহিত্য সংক্রান্ত গবেষণামূলক কাজ বেছে নিয়েছে, যেগুলো ডোগ্রি, গুজরাটি, কাশ্মীরি, মণিপুরী, ওড়িয়া, পাঞ্জাবী, রাজস্থানী, সংস্কৃত, সিন্ধ, অসমীয়া, বোড়ো, বাংলা, তেলুগু, মলায়লম, কন্নড়, সাঁওতালী এবং অন্যান্য ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। যে দেশে কয়েক স্কোয়ার কিলোমিটার পর পরই ভাষার ডায়ালেক্ট পরিবর্তন হয় এবং সংখ্যালঘু কমিউনিটি বা ভাষা, যা সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে, তার নমুনার অভাব নেই, এই ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে, এই পুরস্কারটি যেভাবে ভাষা সংক্রান্ত বৈচিত্রকে স্বীকৃতি প্রদান করা, অবশ্যই তাকে স্বাগত জানাতে হবে। বিশাল সম্ভাবনা আছে: এমন একটা দেশ যেখানে প্রত্যেকেরই পিআর নিয়ে অতি সক্রিয়তা তৈরি করার সামর্থ্য নেই, সেখানে সাহিত্য অ্যাকাডেমি এমন একটা উৎসাহ প্রদান করে, যা তাদেরকে এই দক্ষতা জারি রাখতে সাহায্য করে; লেখকরা তাদের বই বিক্রিতে বৃদ্ধির প্রত্যাশা করতে পারেন এবং তা স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হবে বলেও আশা করতে পারেন; এবং পাঠকরা প্রত্যাশা করতে পারেন, তারাও কিছু লুকানো রত্ন আবিষ্কার করতে পারবেন। এর পাশাপাশি লেখকরা নিজেদের কাজ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ করার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন, যার মধ্যে ইংরেজিও রয়েছে। এই বছর নীলম সরণ গৌর তার ইংরেজিতে লেখা বই ‘Requiem in Raga Janki’-এর জন্য পুরস্কার পেয়েছেন, যেটি ২০১৮-তে দ্য হিন্দু ফিকশন প্রাইজও পেয়েছিল, তা এবার অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ হওয়ার প্রত্যাশা করতে পারেন।
তবে এটা দুঃখের বিষয় যে ১৯৫৫ সালে প্রথমবারের জন্য পুরস্কার প্রদান করা সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে বুকার প্রাইজ বা পুলিৎজারের মতো টপ-অব-দ্য-মাইন্ড রিকল নেই। দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব লেটার্স ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এটির উল্লেখ করা লক্ষ্য হলো, সাহিত্য সংক্রান্ত আলোচনার জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠা, দেশে প্রকাশনা এবং প্রচারের কাজ করা এবং দেশে ইংরেজি সহ ২৪টি ভারতীয় ভাষায় সাহিত্য সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনা জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এটা করার জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি, সব কমিউনিটি সহ লেকচার, রিডিং, আলোচনা, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং কর্মশালার আয়োজন করে। তবে এগুলোর প্রচার এতটাই অপর্যাপ্তভাবে করা হয় যে সামান্য কিছু লোকজন এই প্রোগ্রামগুলোর ব্যাপারে জানতে পারেন। সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার সবার ওপরে থাকলেও বাল্য সাহিত্য পুরস্কার, যুব পুরস্কার, ভাষা সম্মান বা অনুবাদ পুরস্কারের মতো অন্যান্য পুরস্কারও রয়েছে। তবে এই সব কার্যক্রমের প্রচার করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অ্যাকাডেমির ওয়েবসাইট আপডেটেড নয় এবং সেখানে ব্যাকরণগত ভুলের ছড়াছড়ি; সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাদের উপস্থিতি বলার নয়। তারা হাজার হাজার বই প্রকাশ করেছে, তবে প্রকাশনা সাধ্যের মধ্যে থাকলেও তা অর্জন করা বেশ কঠিন। এমন একটা সময়, যখন বিশেষত শিশুরা তাদের ডিজিটাল স্ক্রিনেই মগ্ন এবং পড়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলছে, তখন সাহিত্য অ্যাকাডেমিকে নিজেদের বিশাল নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে ভারতের সমৃদ্ধ সাহিত্য ঐতিহ্যের ব্যাপারে প্রচারের কাজ করার জন্য আরও উদ্যোগী হতে হবে।