২০২৪ সালের মধ্যে দেশের সবাইকে বিমার আওতায় আনতে হবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ভারতের বিমা সেক্টর রেগুলেটরের প্রধান গত সপ্তাহে একটি নয়া ব্লুপ্রিন্ট সামনে এনেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন রোগের থেকে সুরক্ষা প্রদান করার জন্য বিপুল সংখ্যক জনগণকে বিমার অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই উদ্যোগটা অনেকটা “ইউপিআই-এর মতো”। সমগ্র দেশের জন্য এক বিমা নীতি চালু করতে ইন্সুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (আইআরডিএআই) এই উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের একটা বড় অংশের জনগণ এখনও বিমার আওতায় নেই। সেই শূন্যস্থান পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘বিমা বিস্তার’ স্কিমের মধ্যে জীবন বিমা ছাড়াও সাধারণ বিমা রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে মেডিকেল এমার্জেন্সি, দূর্ঘটনা, চুরি বা মৃত্যুর মতো ঘটনার ক্ষেত্রে পরিবারগুলোকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা দেওয়া যাবে। বিমার ফায়দার ব্যাপারে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাই বিপদের সময়ে কীভাবে এরকম স্কিম থেকে সুবিধা পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে প্রত্যেক পরিবারের প্রবীণ মহিলাকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য রেগুলেটরের তরফ থেকে মহিলার নেতৃত্বাধীন গ্রাম সভা-স্তরের একটি উদ্যোগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে সবাইকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে এবং দাবির নিষ্পত্তি করার জন্য একটি নতুন ‘বিমা সুগম’ প্ল্যাটফর্মের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিমা সংস্থা এবং বিতরণকারীগণকে একত্রিত করা হবে। রাজ্যগুলোর মৃত্যু সংক্রান্ত ডিজিটাল নথিভুক্তিকরণকে প্ল্যাটফর্মটির সাথে লিঙ্ক করা হবে। রেগুলেটর মনে করে, এর ফলে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বা একদিনের মধ্যেই বিমা সংক্রান্ত দাবির নিষ্পত্তি করা যাবে।
ক্যাপিটাল নীতি বিষয়ক যে শর্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেটির পুনর্বিন্যাস করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের চিন্তাভাবনা চলছে। এমনকি বেশ কিছু নতুন সংস্থাকে বাজারে আনার এবং যে ক্ষত্রগুলোতে প্রয়োজন মেটানোর খামতি রয়েছে এবং স্পেশালাইজড সেগমেন্টগুলোতে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। ভারতের বিমা ক্ষেত্রটি একটা সময় মূলত সরকারি সংস্থাগুলো দ্বারাই পরিচালিত হতো। পরে সেগুলোর পরিষেবার মান সন্তোষজনক ছিল না। তারপর বিমা ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলো পা রাখে। এপর পরই ভারতে বিমার বিস্তার ঘটতে থাকে। ভারতে বিমার পেনিট্রেশন (জিডিপির প্রেক্ষিতে প্রিমিয়াম পেমেন্টের হার) ২০০১-০২ সালে ২.৭% ছিল। ২০২১-২২ সালে সেই সংখ্যাটা বেড়ে ৪.২% হয়েছে। ঘটনা হচ্ছে, গত দশকের ২০০৯-১০-এর ৫.২% থেকে মেট্রিকে হ্রাস দেখা গিয়েছে। নন-লাইফ পলিসি এখনও ১% অতিক্রম করেনি। ভারতের বিপুল জনসংখ্যা এবং আর্থিক ব্যাপারে সচেতনতার অভাবের কথা মাথায় রেখে বলতে হয়, এই বর্তমান অবস্থার উন্নতি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজ্য সরকারগুলোকে অংশগ্রহণ করতে এবং রাজ্য-স্তরের ব্যাঙ্কিং কমিটির মতো সংস্থা গড়ে তুলতে আইআরডিএআইয়ের উদ্যোগের ফলে জেলা ভিত্তিক কৌশল তৈরি করা সহজ হবে। তাতে সচেতনতার পাশাপাশি বিমার আওতার লেভেল বাড়বে। বিমা সংস্থাগুলোকেও বড় শহরের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। এই প্রসঙ্গে বলতে হয়, ‘বিমা বিস্তার’ স্কিমটি তাদেরকে পরিচিত এলাকার বাইরেও পা রাখতে সাহায্য করবে। সব শেষে বলতে হয়, কেন্দ্র স্বাস্থ্য এবং জীবন বিমার প্রিমিয়ামে যে ১৮% জিএসটি চাপিয়েছে, তা পুনরায় বিবেচনা করা উচিত। ভারত এমন একটি দেশ, যেখানে পরিবারের কোনো সদস্য গুরুতর অসুস্থ হলে, পরিবারটি দারিদ্র সীমার নিচেও চলে যেতে পারে। তাই, যারা স্বাস্থ্য বিমা কিনতে পারেন, তাদের এই বেশি ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষমতা আছে বলে যে ধরে নেওয়া হয়, তা ঠিক নয়। এর পাশাপাশি আইআরডিএআইতে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান চেয়ারপার্সনের আগে সংস্থাটির শীর্ষ পদে নয়-মাসের যে শূন্যতা ছিল, তা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।