সুপ্রিমকোর্ট এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি) পরামর্শ দিয়েছে, তারা যেন একটা আতঙ্কের পরিবেশ না তৈরি করে। বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাটির অতি উৎসাহ যে কমানো প্রয়োজন, দেশের শীর্ষ আদালতের এই পরামর্শের মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ে মদ ব্যবসাতে কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রসঙ্গে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের নামে আবগারি দপ্তরের কর্মীদেরকে ইডি হেনস্থা করছে বলে আদালতে নালিশ করা হয়। তারই প্রতিক্রিয়ায় আদালত এই মন্তব্য করেছে। সুপ্রিমকোর্টের একটি বেঞ্চ বলেছে, আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থার কোনো যথাযথ পদক্ষেপকেও সন্দেহের চোখে দেখা হতে পারে, যদি তারা এমনভাবে কাজকর্ম পরিচালনা করে, যা থেকে আতঙ্ক তৈরি হয়। সুপ্রিমকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ আইন মোতাবেক তদন্তের সীমা অতিক্রম করার বিরুদ্ধে একটি হুঁশিয়ারি। এর পাশাপাশি কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা যে কোনো পন্থা অবলম্বন করতে পারে বলে যে ধারণা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও এটা আদালতের একটা সতর্কবাণী। যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি ছাড়া অন্য দল ক্ষমতায় রয়েছে, সেখানে অনেক নেতা-মন্ত্রীকে ইডি সমন পাঠিয়েছে, অনেককে আবার গ্রেফতার করেছে এবং জেলে পুরেছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে ছত্তীসগঢ় সরকারের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ভূপেষ বাঘেলকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য রাজ্যের সরকারি অফিসারদেরকে ইডি হুমকি দিচ্ছে এবং অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করছে। এমন অভিযোগে অনেকেই অবাক নন। এই অভিযোগগুলো সত্যি হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। তবে মূল সমস্যা হলো বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদেরকে টার্গেট করে ইডির সক্রিয় হওয়ার প্রবণতা অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের একটি প্রধান অভিযোগ হলো, তদন্ত সংস্থাগুলোর তদন্তে এবং যারা এগুলো পরিচালনা করছেন, তাদের হাতে রাজনীতির রং লেগেছে। অনেক রাজনৈতিক দলের আশঙ্কা, বিরোধীদের কোণঠাসা করে দেওয়ার জন্যই অর্থ তছরুপ সংক্রান্ত আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে। যে সমস্ত অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্ত ছাড়াও অর্থ তছরুপের ধারা প্রযোজ্য হতে পারে, এমন অপরাধের তালিকাটা অনেক লম্বা। ক্ষমতায় থাকা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে প্রায়শই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। যখনই এরকম কোনো জালিয়াতি বা কেলেঙ্কারির কথা জানা যায়, তখন যে সংস্থাটি দুর্নীতির তদন্ত করছে, তাদের কার্যক্রমের ওপর খুব কাছ থেকে ইডি নজরদারি চালায়, যাতে তারা প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অধীনে পৃথকভাবে একটি মামলা দাখিল রেজিস্টার করতে পারে। এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনের কঠোর ধারা প্রয়োগ করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে নির্দিষ্ট পেঅফ বা টাকা লেনদনেনের প্রমাণ ছাড়াই অতি উৎসাহ নিয়ে তদন্ত করার আগে এই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে সতর্ক হতে হবে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের বর্তমান ডিরেক্টরকে ২০১৮ সালে দুই বছরের মেয়াদে নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে তিনি এখনও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার কার্যকালের মেয়াদে এক্সটেনশন প্রদান করা হয়েছে এবং অনুরূপ এক্সটেনশন পরিচালনাকারী আইনে সংশোধন করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এবার সুপ্রিমকোর্টকে জানিয়েছে, ইডির বর্তমান ডিরেক্টর ২৩ নভেম্বরের পর আর দায়িত্ব থাকবেন না। সরকার অনেক সময় বলে এজেন্সি আইন অনুযায়ী তদন্ত করছে এবং নিজের কাজ করছে। তবে এই ধরনের এজেন্সির নেতৃত্বকে সরকার যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, তাতে এজেন্সির কাজকর্মের ব্যাপারে লোকজনের মধ্যে ইতিবাচক ধারনা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
COMMents
SHARE