গ্রীষ্মের রাতে বৃষ্টিতে হয়তো কোথাও একটু তাল কেটেছে। তবে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত গড়ানো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ফাইনালে ট্রফি যে চেন্নাই সুপার কিংসের (সিএসকে) হাতে যাচ্ছে, এমন একটা জোরালো সম্ভাবনা ছিল। আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে শেষ ওভারে রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিয়েছে সিএসকে। তারা গতবারের চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্সকে পরাজিত করেছে। তিনদিন ধরে চলতে থাকা টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচটির শেষ ওভারে রবীন্দ্র জাডেজার ব্যাট থেকে জয়ী রান এসেছে। বৃষ্টির কারণে রবিবার ম্যাচ ভেস্তে যায়। সোমবারও বৃষ্টিতে ম্যাচে ব্যাঘাত ঘটে। ম্যাচ দেরিতে শুরু হয়। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত ম্যাচ চলতে থাকে। তবে এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে সিএসকে নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল। দলটির অধিনায়ক এম.এস ধোনি এই গুণের জন্য পরিচিত। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, আরও একটি আইপিএল মরসুম খেলতে পারেন। এটা বললে বোধহয় ভুল হবে না যে, আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল সিএসকে ফাইনালে নতুন টিমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় টাইটান্সের মুখোমুখি হয়েছিল। চূড়ান্ত এই লড়াইয়ে টি-২০ ক্রিকেটের সমস্ত উপাদান হাজির ছিল। ধোনির তড়িৎ গতির স্টাম্পিংয়ের সৌজন্যে শুভমান গিলকে ৩৯ রানে আউট করে সিএসকে প্রথম ঝটকা দিয়েছিল। তবে চেন্নাইয়ের বাসিন্দা, সাই সুদর্শনের ৯৬ রানের ঝোড়ো ইনিংসের দৌলতে চার উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান তোলে টাইটান্স। বৃষ্টির বিরতির জেরে রানের টার্গেট কমিয়ে ১৭১ করা হয়। সিএসকের এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে অসুবিধা হয়নি (যদিও ধোনি শূন্য রানে আউট হন)। শেষ ওভারে জাডেজার ব্যাটিং দক্ষতায় চেন্নাই জয় তুলে নেয়।
এই ম্যাচটির মাধ্যমেই ১০ দলীয় টুর্নামেন্টের সমাপ্তি ঘটে। সিএসকে এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অন্যতম পুরানো দল, যারা আইপিএলের প্রথম থেকেই রয়েছে। অন্যদিকে টুর্নামেন্টে গত বছর ডেবিউ করেছে টাইটান্স এবং লখনউ সুপারজায়েন্টস। এই দুটি দল এই বছর শেষ চারে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, নতুন হলেও এই দুটি দলের ভিত বেশ মজবুত। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবারের টুর্নামেন্টে ধীর গতিতে যাত্রা শুরু করে। পরে গিয়ে তারা জয়ের ছন্দ ফিরে পায়। তবে সিএসকে বরাবরই প্লেঅফে যাওয়ার দৌড়ে ছিল। বাকি দলগুলোর মধ্যে, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দিশা খুঁজে পায়নি। তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলির দলের কাছে ফের একবার অধরা থেকে গেল আইপিএলের ট্রফি। গিল (৮৯০ রান) যদি প্রমাণ করে থাকেন যে তিনি সাদা বলের ক্রিকেটে কোহলি এবং রোহিত শর্মার উত্তরাধিকারী, তাহলে অজিঙ্কে রাহানে, ঋদ্ধিমান সাহা এবং মোহিত শর্মার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা দেখিয়ে দিয়েছেন, তারা টি-২০ ফরম্যাটেও দক্ষ। হার্দিক পাণ্ডিয়া টাইটান্সকে ভালো নেতৃত্ব দিয়েছেন। একটু ভাগ্য সহায় হলে, তিনি হয়তো এবারের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন। তবে সিংহলিজ পেসার মাথিসা পথিরানা সিএসকের ডাগআউট এবং অনুরাগীদের কাছ থেকে অবিশ্বাস্য সাপোর্ট পেয়েছেন। এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে খেলার মাধ্যমে অনেক সময় সম্পর্কের পুরানো ক্ষতও শুকিয়ে যায়। এর পাশাপাশি পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতি থেকে বোঝা যায়, ক্রীড়াক্ষেত্রে রাজনীতির প্রভাব কতটা থাকতে পারে। এবারের মতো আইপিএল শেষ হয়েছে। তবে ভারতীয় তারকাদের কাছে এখন বিশ্রাম করার সময় নেই। তারা ৭ জুন থেকে লন্ডনের ওভালে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নামার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।