ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরিচালিত ২০২২ সালের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় মহিলারা প্রথম তিনটি স্থান দখল করেছেন। এই নিয়ে পর পর দুইবার এমন নজির তৈরি হলো। মঙ্গলবার পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, সেরা ২০-তে থাকা প্রার্থীদের মধ্যে ১২ জনই মহিলা। সবার সেরা হয়েছেন গ্রেটার নয়ডার বাসিন্দা, ২৬ বছর বয়সী ঈশিতা কিশোর। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা শ্রীরাম কলেজ অব কমার্সের এই ছাত্রী তার তৃতীয় প্রচেষ্টাতেই এই অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। এই সাফল্যের জন্য তিনি নিজের পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ঈশিতা বলেন, তিনি কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কে পড়াশোনা করতেন এবং লেখা প্র্যাক্টিস করতেন, তার কারণ পরীক্ষা পদ্ধতিটি বেশ ক্লান্তিকর হতে পারে। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন বক্সারের বাসিন্দা, ২৪ বছর বয়সী গরিমা লোহিয়া। তিনিও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতেই তিনি সফল হয়েছেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ২৮ বছর বয়সী উমা হারাথি। তেলেঙ্গানার এই ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক নিজের পঞ্চম প্রচেষ্টাতে সফল হয়েছেন। ভবিষ্যতে যারা এই পরীক্ষায় সফল হতে চান, তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বাবা-মায়েদের কাছে, সাফল্য ও ব্যর্থতার ব্যাপারে এই তরুণীদের গভীর চিন্তাভাবনা, সমস্ত বাধার বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতার প্রয়োজনীয়তা এবং যে ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে তারা প্রস্তুত হয়েছেন, তা শিক্ষণীয় ব্যাপার। বিশেষ করে ছাত্রীদের এই সাফল্য অনুপ্রেরণা প্রদান করে। আশা করা যায় যে, আগামীতেও তাদের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বাবা-মায়েরা সঠিক পরিবেশ তৈরি করবেন। মূলত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জন্য অনেক মেয়েকে মাঝপথেই এই সফরে ইতি টানতে হয়।
এই বছর প্রায় ১১.৫ লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন। তার মধ্যে ৯৩৩ জন প্রার্থীকে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস, ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস, ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস এবং সেন্ট্রাল সার্ভিস, গ্রুপ এ এবং গ্রুপ বিতে নিয়োগ করার জন্য ইউপিএসসির তরফ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় সফলদের মধ্যে ৬৩% (৫৮৮ জন প্রার্থী) আর্থিকভাবে দুর্বল কমিউনিটি, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণী, তফশিলি জাতি এবং উপজাতি ক্যাটেগরি থেকে উঠে এসেছেন। গরীবদের জন্য শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে নীতি সংক্রান্ত যে শূন্যস্থান রয়েছে, তা পূরণ করতে এটি সহায়ক হবে। শ্রেণীকক্ষের মধ্যে সফল হওয়া ছাত্রছাত্রীদেরকে এবার ময়দানে নেমে তাদের দক্ষতা দেখাতে হবে। ভারতের মতো একটি বৈচিত্রপূর্ণ দেশে, প্রত্যেক কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই নানা চ্যালেঞ্জ ছড়িয়ে রয়েছে। তাদেরকে ঘৃণা, সহিংসতা, কুসংস্কার, বৈষম্য এবং অন্যান্য প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হতে পারে। উল্লেখযোগ্যভাবে সফল আইএএস অফিসারদের মধ্যে অনেক মহিলা রয়েছেন। স্বাভাবিক নীতি হিসাবে, তাদেরকে গ্রাম বা আধা শহর অঞ্চলে প্রথমবার নিয়োগ করা হয়। বাস্তবে কী পরিস্থিতি বা সমস্যা আছে, তাদেরকে সেই দিকে নজর দিতে বলা হয়। এর একটা উদাহরণ হিসাবে শিশুদের শিক্ষার অধিকারের কথা বলা যায়। তারা এরকম সমস্যাগুলো বেছে নিয়ে তার সমাধান করার চেষ্টা করেন। মহিলা সিভিল সার্ভেন্টরা প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটি মজবুত কাঠামো তৈরি করছেন। তাদেরকে হয়তো চাপের মধ্যে কাজ করতে হবে। তবে এরকম মহিলাদের পরিষেবা, বিশেষ করে যাদের খোদ নিজেদেরই প্রান্তিক অবস্থায় থাকার অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে, তা ভারতের ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।