আজ থেকে সাড়ে সাত বছরের কিছু আগের কথা। ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে দেওয়া হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিকর সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর এবার গত ১৯ মে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে যে, ২০০০ টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে। এতে ফের একবার আগের নোট বাতিলের প্রসঙ্গ সবার মনে উঁকি দিচ্ছে। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হঠাৎ করে যে নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন, তার পিছনে মূল যুক্তি ছিল কালো টাকার মোকাবিলা করা এবং সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত বন্ধ করে দেওয়া। আরবিআই দাবি করেছে যে, সর্বশেষ পদক্ষেপটি ‘স্বচ্ছ নোট নীতির’ সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া প্রত্যাহার করা নোটগুলোর আইনী বৈধতার স্ট্যাটাসে কোনো পরিবর্তন হিসাবেও এটাকে দেখা যাবে না। তবে প্রত্যাহার করা নোট ফেরত দেওয়ার বা জমা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ৩০ সেপ্টেম্বরের ডেডলাইন সেট করেছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আবার উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সেই নোটগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকে সমস্যায় পড়েছেন। নোটের আইনী বৈধতা এখনো বাতিল হয়নি। তবুও দেশের নানা জায়গাতেই দিন মজুর সহ সাধারণ গ্রাহকরা এই নোট দিয়ে ওষুধপত্র, পেট্রোল বা অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। এমনই খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরবিআই আগেই জানিয়েছিল যে ২০১৮-১৯ থেকেই ২০০০ টাকার নোট ছাপানোর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে কেন এই নোটগুলো প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, এর পিছনে কী যুক্তি আছে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন এবং ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আইরবিআই জানিয়েছে, ২০০০ টাকার ৮৯% নোট ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ইস্যু করা হয়েছিল, যাতে নোটবন্দির পর বাজারে প্রয়োজনীয় নোটের চাহিদা দ্রুত গতিতে পূরণ করা যায়। তার পর থেকে কম মূল্যের নোট উপলভ্য হয়েছে এবং ২০০০ টাকার নোটের প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আরও বলেছে, যে নোটগুলো প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো তাদের ৪-৫ বছরের লাইফ স্প্যানের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। বাজারে থাকা এই নোটগুলোর মূল্য ৩১ মার্চের হিসাব অনুযায়ী, হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৩.৬২ লক্ষ কোটি বা সার্কুলেশনে থাকা মোট নোটের ১০.৮%। আরবিআইয়ের আগের বিলগুলো প্রত্যাহারের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, ২০০৫ সালের আগে ইস্যু করা ব্যাঙ্ক নোটগুলো ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করার কাজ শুরু হয়, যদিও সেগুলোর আইনী বৈধতা অপরিবর্তিত ছিল। এমনকি ২০১৩ সালে ইস্যু করা অনেক নোট এখনও প্রাত্যহিক লেনদেনে ব্যবহার করা হয়। সেগুলো এখনও সার্কুলেশনে রয়েছে। তাই আরবিআইয়ের ‘স্বচ্ছ নোট’ নীতির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আরবিআই নিজস্ব বিবেচনাক্রমে নতুন নোট ইস্যু করতে বা প্রত্যাহার করতে পারে। তবে এই ব্যাপারে স্বচ্ছতার অভাব এবং প্রশাসনিক খামখেয়ালির কারণে এই প্রসঙ্গে নোটের বাহকদের বা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ আস্থা তৈরি হয় না।
COMMents
SHARE