একটি গ্রাম্য খেলা। বহু বছর ধরে এটিকে প্রাণীদের ওপর নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন বলে আদালত দেখে এসেছে। তবে শেষ পর্যন্ত এটি বিচার বিভাগের ছাড়পত্র বা অনুমোদন পেল। জাল্লিকাট্টু নিয়ে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত পরিবর্তন করা হয়েছিল। এর ফলে এটিকে প্রাণীদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের আইনের আওতার বাইরে রাখা হয়। আদালতের নির্দেশে জাল্লিকাট্টুতে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, এই আইনী সংশোধনীর কারণে তা উঠে যায়। সেই পদক্ষেপের ছয় বছর পরে সুপ্রিমকোর্ট জানিয়েছে, তামিলনাড়ু আইনসভাতে নেওয়া এই পদক্ষেপে ভুল কিছু নেই। উন্মত্ত ষাঁড়কে পুরুষদের বাগে আনার একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা হলো জাল্লিকাট্টু। এর সাথে সাংস্কৃতিক ভাবাবেগ জড়িয়ে আছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে সেটি তুলে ধরা হয়েছে। এই খেলার সমর্থক এবং অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। এর জেরে ২০১৪ সালে জাল্লিকাট্টুকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আদালত। অ্যাক্টিভিস্টদের বক্তব্য, মানুষ এবং ষাঁড়ের মধ্যে যে কোনো ফিজিক্যাল কনটেস্টেই প্রাণীদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়। যদিও অন্য পক্ষের মতে, রাজ্যের ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে থাকা এই খেলাটি কোনো কারণেই বন্ধ করা উচিত নয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞার জেরে রাজ্য সরকার প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন বিরোধী আইন, সেন্ট্রাল প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট, ১৯৬০-এ সংশোধনী আনে। এমনকি প্রেসিডেন্টের সম্মতিও নেওয়া হয়। এত কিছুর পর এবার সুপ্রিমকোর্টের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ জাল্লিকাট্টুর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্ট্যাটাসে অনুমোদন দিয়েছে।
দুটি মূল অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পাঁচজন বিচারপতির বেঞ্চের এই রায় সাজানো হয়েছে। নতুন করে রেগুলেশন জারি করলে তা এই খেলাতে প্রাণীদের ওপর হওয়া অত্যাচারের সম্ভাবনা হ্রাস করবে। এই চিন্তাধারা থেকেই ২০১৪ সালের রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। দ্বিতীয়ত, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি অনুসরণ করার জন্য প্রত্যেক বছর জাল্লিকাট্টু পরিচালনা করার জন্য আইনসভার অবস্থানকে আদালত মান্যতা দিয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মানে কী, তা নির্ধারণ করার জন্য আইনসভার দেওয়া সংজ্ঞাকে তারা স্বীকার করে নিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, এরকম একটা বিষয়ের সাংস্কৃতিক দিকে নিয়ে তারা তদন্ত করতে পারে না। তবে তার মানে এই নয় যে, প্রাণীদের অধিকারের পক্ষে, আন্তর্জাতিক নিয়মাবলীর প্রেক্ষিতে ভারতীয় আইন খতিয়ে দেখার পর সুপ্রিমকোর্টের বেঞ্চ আগে যে নির্দেশ দিয়েছিল, সেটাকে খাটো করে দেখা হচ্ছে। জাল্লিকাট্টু, কাম্বালা নামে পরিচিত কর্ণাটকে ষাঁড়েদের দৌড় এবং মহারাষ্ট্রে গরুর গাড়ি নিয়ে দৌড়ের মতো খেলাগুলোতে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন বিরোধী আইনের এক্তিয়ারের বাইরে সাথে যে সাংস্কৃতিক ভাবাবেগ জড়িয়ে আছে, সেই দিকটাই আদালতের পর্যবেক্ষণে ফুটে উঠেছে। যার মানে, প্রাণীদের ওপর যাতে কোনো অত্যাচার না করা হয়, তা নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব এখনও এই সমস্ত অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং সংশ্লিষ্ট সরকারের কাঁধে রয়েছে। এই খেলাগুলোতে মানুষের ওপরও যে একটা ঝুঁকি আছে, সেটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। শুধু অংশগ্রহণকারীরাই নন, অনেক সময় দর্শকরাও এই বিপদের মুখে পড়েন। তাই এখন আয়োজকদের উচিত অংশগ্রহণকারীদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে সুরক্ষামূলক পোশাক পরানো এবং দর্শকদেরকে সুরক্ষিত রাখতে যথাযথ ব্যারিকেডের জন্য কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা। সাংস্কৃতিক গুরুত্বের বিষয়, প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়া এবং সুরক্ষাবিধি মেনে চলাকে পৃথক পৃথক প্রেক্ষিতে দেখলে চলবে না।
COMMents
SHARE