দিল্লির ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অঞ্চলের নির্বাচিত সরকারের নিজেদের আমলা বা কর্মকর্তাদের ওপর এগজিকিউটিভ এবং লেজিসলেটিভ ক্ষমতা থাকবে। গত ১১ মে সুপ্রিমকোর্ট এমনই নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার একটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সেই নির্দেশ বদল করার রাস্তা তৈরি করেছে। আর এটিকে ঘিরেই নতুন করে আইনী লড়াই শুরু হয়েছে। কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপ সরকার। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সুপ্রিমকোর্টকে নিজের রায় পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছে। দ্য ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটোরি অব দিল্লি অ্যাক্ট (এনসিটিডি), ১৯৯১ একটি অনন্য প্রশাসনিক ইউনিট তৈরি করেছে। বিচার বিভাগীয় ব্যাখ্যাকারীরা এতগুলো বছর ধরে কেন্দ্র এবং এনসিটিডির নির্বাচিত সরকারের মধ্যে বিরোধগুলো সম্পূর্ণভাবে মিটিয়ে ফেলতে পারেনি। রায়ে বলা হয়েছিল, যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের, অন্যান্য রাজগুলোর মতো নিজস্ব আইনসভা রয়েছে, সেখানে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষেত্রে অনুমোদিত সমস্ত বিষয়ে সেই সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে। দিল্লির ক্ষেত্রে, আইনশৃঙ্খলা এবং জমি সংক্রান্ত বিষয়ের এক্তিয়ার কেন্দ্রের কাছে রয়েছে। যদিও রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। এছাড়া পরিষেবা সম্পর্কিত আইনের অনুপস্থিতি এবং বর্তমান স্কিম অধীনে নির্বাচিত সরকারের নিজেদের কর্মীদের ওপর পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণের যে অভাব রয়েছে, আদালতের পর্যবেক্ষণে তা উঠে আসে। ন্যাশনাল ক্যাপিটাল সিভিল সার্ভিস অথরিটি তৈরির মাধ্যমে অর্ডিন্যান্সটি বিচার করার ভিত্তিটাই সরিয়ে দিয়েছে বলে স্পষ্ট হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য প্রশাসক। তবে চিফ সেক্রেটারি এবং প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, স্বরাষ্ট্র দপ্তর কেন্দ্র দ্বারা নিয়োগ করা হয়, সদস্য হিসাবে। জাজমেন্টের মাধ্যমে কেন্দ্র তাদের হারানো সমস্ত ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে।
কেন্দ্র নিজের আইনী এক্তিয়ারের মধ্যে থেকেই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় ঘোষণা খারিজ করে দিয়েছে। ইন্সট্যান্ট জাজমেন্ট করার ভিত্তিটা অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না, তা একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন। তবে আরও প্রাসঙ্গিক বিষয় হলো কেন্দ্রের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। বিজেপি সরকারের আমলে দেখা গিয়েছে যে, রাজ্যগুলোতে প্রশাসন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কেন্দ্র অনেক সময়ই বিরোধীতার পথ বেছে নিয়েছে। নিম্নতর স্তরের নির্বাচিত সরকারকে তারা খুব একটা তোয়াক্কা করেনি। এছাড়া নিজেদের নির্বাচনী সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিজেদের সমস্ত ক্ষমতা দাবি করেছে। দিল্লি যেহেতু দেশের রাজধানী, তাই তার একটি অনন্য প্রশাসনিক ধরন রয়েছে। স্থানীয় রাজনীতির স্রোতে তা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এর পাশাপাশি, অপ্রাসঙ্গিক কোনো কারণে দিল্লির ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়াও অনুচিত। তবে মজার ব্যাপার হলো এই আপই একসময় সেন্ট্রালাইজেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের নেতাদের সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য সেটা প্রভিন্সিয়ালিজমের দিকে ঝুঁকতে পারে। আপ সরকার অতীতেও প্রভিন্সিয়ালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছে। এর জন্য তারা ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অঞ্চলে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা পরিষেবাতে অন্য রাজ্যের লোকজনের অ্যাক্সেস করার অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। জম্মু এবং কাশ্মীরের দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ভেঙে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের পদক্ষেপকে এই আপ এক সময় বাহবা দিয়েছিল। ক্ষমতা দখল করার অনৈতিক ইচ্ছার কারণে গণতন্ত্র এবং ফেডারেলিজম আজ বিপদের মুখে। এর জন্য আপকে যেমন দোষ দেওয়া যায়, তেমনি তারাই আবার এর কারণেই সমস্যায় পড়েছে।
COMMents
SHARE