জি-৭ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য শুক্রবার জাপানের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবারের সম্মেলনে ভারত বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য। মোদি বলেছেন, এই বছরের সম্মেলনে ভারতের অংশগ্রহণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মোদি এক্ষেত্রে জি-২০-তে ভারতের সভাপতিত্বের বিষয়টি বোঝাতে চাইছিলেন। জি-৭-এর জন্য জাপানের অ্যাজেন্ডার সাথে জি-২০ অ্যাজেন্ডাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলাটা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই উইকএন্ডে শুরু হতে চলা সম্মেলনে ভারতের উপস্থিতি যে বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো, তার একাধিক কারণ আছে। জাপান, সম্মেলনের আয়োজক হিসাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছে। ভারতে থাকা জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, পুতিনকে অবশ্যই এই বার্তা দিতে হবে যে, ইউক্রেনে যুদ্ধের খেসারত রাশিয়াকেই দিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন - এই জি-৭ দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জন্য এককাট্টা হয়েছে। ভারত এতদিন এই বিষয়টিতে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কমোরোস এবং কুক আইল্যান্ড সহ আউটরিচ দেশগুলোর থেকে যৌথ বিবৃতি চাওয়া হয়, তাহলে ভারতকে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে হতে পারে। রাশিয়া বা চিন, কাউকেই এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ করা হয়নি। তাই এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শক্তিশালী দেশ হিসাবে ভারত কী অবস্থান গ্রহণ করে, তা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। জি-৭ দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে খাবার, সার এবং বিদ্যুতের নিশ্চয়তা সহ নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর যে বিরুপ প্রভাব পড়েছে, সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মোদি এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। জি-৭ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য জাপানের আমন্ত্রণ স্বীকার করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি সশরীরে হাজির থাকবেন। তার সাথে মোদির সম্ভাব্য মিটিংয়ের ওপর ভারতের সবার নজর থাকবে। যদি তা হয়, সেটাই হবে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথম মিটিং। সেপ্টেম্বরে জি-২০ সম্মেলনে জেলেনস্কিকে মোদি আমন্ত্রণ জানান কি না, সেই দিকেও জি-৭ দেশগুলোর নজর থাকবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন বিবাদ ছাড়াও, ঋণের স্থায়িত্ব এবং “ঋণের ফাঁদ” এড়াতে, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোকে সাহায্য করার ব্যাপারে জি-৭ এবং জি-৭+ দেশগুলোর আলোচনায় ভারতে সম্মুখভাবে থাকবে। সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্যতা গড়ে তোলা, বিকল্প শক্তি সংক্রান্ত জোট চালনা করা এবং অঞ্চলটিতে পরিকাঠামো এবং উন্নয়নে সাহায্য লাভের মতো বিষয়গুলোতেও ভারত অন্যতম মূল বক্তার ভূমিকা পালন করবে। ১৯৪৫ সালে মার্কিন পরমাণু বোমা হামলায় তছনছ হয়ে গিয়েছিল জাপানের হিরোশিমা। সেই হিরোশিমা থেকেই নন-প্রলিফারেশন বা পরমাণু শক্তির অনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে জাপান বার্তা দেবে। ভারত একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ হলেও নন-প্রলিফারেশন ট্রিটির সদস্য নয়। তবুও পরমাণু শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত নজিরবিহীন সংযম দেখিয়েছে। জাপান এই ব্যাপারে বিশদ জানতে আগ্রহী। জি-৭ সম্মেলনের মূল কাজগুলো জাপান এবং সদস্য দেশগুলোই করবে। এই গোষ্ঠীকে এখনও একটি ক্ষুদ্র এবং “এলিটিস্ট” গ্রুপ হিসাবে দেখা হয়। জি-২০-তে সভাপতিত্ব করা সহ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে ভারতের উত্থান এই বছরের সম্মেলনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হতে চলেছে। গোষ্ঠীর বাইরে থাকা “অন্য” একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে ভারত নিজের উপস্থিতি জাহির করতে পারবে। তাতে প্রক্রিয়াটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠবে।
COMMents
SHARE