আইন এবং ন্যায়বিচার মন্ত্রক থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এর কারণ আন্দাজ করতে বিশেষ সমস্যা হবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে তার প্রশাসন একাধিকবার বিচার ব্যবস্থার সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মেয়াদ আর এক বছর রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে যাতে আর কোনো রকম লড়াই বা বিবাদ না হয়, তা এড়াতেই রিজিজুকে সরিয়ে দেওয়া হলো। কাজের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিবেচনার মধ্যে রয়েছে, ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকে রিজিজুকে দায়িত্ব দেওয়া এবং আইন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে অর্জুন রাম মেঘওয়ালকে নিয়োগ করা। সুপ্রিমকোর্টের কলেজিয়ামের বিরুদ্ধে রিজিজুকে প্রায়শই বিস্ফোরক কথাবার্তা বলতে শোনা গিয়েছে। তার এই বিরোধের আগুনে কিছুটা জল ঢালার জন্যই যে তাকে আইন মন্ত্রক থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। কিছু সুপারিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে নিষ্ক্রিয়তা বা বিলম্ব দেখা গিয়েছে। আবার ফেব্রুয়ারি থেকে সুপ্রিমিকোর্ট সহ কিছু নিয়োগে প্রক্রিয়াতে এগজিকিউটিভের সাথে বিচার বিভাগের দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। রিজিজু কলেজিয়াম সিস্টেমের কড়া সমালোচনা করেছেন। অবশ্য শুধু তিনি একাই নন, অনেকেই এই সিস্টেমের মধ্যে গলদ রয়েছে এবং এটির সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। তবে রিজিজু যেভাবে চাঁচাছোলা ভাষায় নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন, সেটা উচ্চতর বিচারবিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে কাজ করা আইন মন্ত্রকের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে খুব একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেনি। রিজিজু একবার বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে, কিছু অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে “ভারত-বিরোধী গ্যাং” বলেছিলেন। মন্ত্রীর আরও দাবি, তারা বিচার বিভাগকে বিরোধী দলের মতো করে তুলতে চাইছেন। এছাড়া কলেজিয়াম জনসমক্ষে কিছু ইন্টেলিজেন্স ইনপুট তুলে ধরে, যার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদেরকে সুপারিশ করা হয়। যদিও সরকার এটিকে অনুপযুক্ত বলে মনে করেছিল। রিজিজু এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
মেঘওয়াল রাজস্থানের বিকানেরের একটি সংরক্ষিত নির্বাচনী কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করেন। মোদি হয়তো রাজস্থানের কাউকে হাই প্রোফাইল মন্ত্রী পদে নিয়োগ করার একটা সুযোগ খুঁজছিলেন। এর পিছনে নির্বাচনের একটা প্রাসঙ্গিকতা আছে। চলতি বছরের শেষের দিকে রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মেঘওয়াল দায়িত্ব গ্রহণ করেই বলেছেন, বিচার বিভাগের সাথে কোনো বিরোধ নেই। তিনি বলেছেন, সবার জন্য দ্রুত ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করাকে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। জুডিসিয়াল নিয়োগের জন্য নতুন করে মেমোরেন্ডাম অব প্রসিডিওর চূড়ান্ত করার ব্যাপারে যে সমস্যা হয়েছে, সেটির সমাধান করতে হবে। রিজিজু এই বছরের প্রথম দিকে বলেছিলেন, সুপ্রিমকোর্টের কাছে সরকার গুরুত্ব দিয়ে বলেছে যে এই পদ্ধতিটি দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের জন্য তিনি একটি ‘সার্চ-কাম-মূল্যায়ন কমিটির’ কথাও ভেবেছিলেন, যেখানে একজন সরকারি প্রতিনিধি থাকবেন। সরকার এই বিষয়গুলোতে আগের মতোই গুরুত্ব দেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে সরকার এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন এমন একটা ধারনা না তৈরি করে যে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ পেতে চায়।
COMMents
SHARE